আশরাফুল ইসলাম শ্রীপুর গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
প্রবাসী রেজওয়ান কাজলের স্ত্রী সন্তান সহ চারজন খুন হওয়ার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ভালোবাসার টানে ইন্দোনেশিয়া পাড়ি দিয়ে বিয়ে করেন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজওয়ান কাজলকে।
কিন্তু ফাতেমার সেই স্বপ্ন, ভালোবাসাকে নিমিষেই শেষ করে দিল পাষুন্ড ঘাতকেরা। গত ২৩ এপ্রিল২০২০সালে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকার আবদার গ্রামের প্রবাসী রেজওয়ান কাজলের স্ত্রী স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪০), তাঁর মেয়ে নূরা আক্তার (১৫), শাওরিন আক্তার (১২) ও ছেলে ফাদিল (৫)কে। সেই হত্যার সংবাদ বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরলে সারা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনার কারণে হত্যাকান্ডের চারদিনের মধ্যেই ৬ জন আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন,পারভেজ (১৮), সঙ্গে ধর্ষণ ও হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া তার বাবা রিকশাচালক কাজীম উদ্দিন ( ৫০), বশির ( ২৬), আবু হানিফ ( ৩২), হেলাল উদ্দিন ( ৩০) ও এলাহী মিয়া ( ৩৫)।এ সময় তাদের কাছ থেকে লুটে নেওয়া নগদ ৩০ হাজার টাকা, ১টি হলুদ গেঞ্জি, ১টি জিন্স প্যান্ট, ৩টি লুঙ্গি এবং ১টি আংটি উদ্ধার করা হয়।
তারমধ্যে ৬ জনই আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছে।তার পর আসামীদের তথ্য অনুযায়ী হত্যা কান্ডের সাথে জরিত আরো দুজনের নাম বেরিয়ে আসে এবং পরবর্তী সময়ে চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কার সহ কামরুন্নাহার ও তার স্বামীকে গ্রেফতার করেন পিবিআই। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ১৮ মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন বিচার হয়নি খুনিদের।এই হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভিস্টিগেশন (পিবিআই) ইন্সপেক্টর হাফিজুর রহমান।
এই হত্যার ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো স্ত্রী-সন্তানের কথা মনে করে অশ্রু ফেলেন প্রবাসী রেজওয়ান কাজল, আর বাবা আবুল হোসেন তালুকদার নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যান।
সোমবার(১১ অক্টোবর ) রেজওয়ান কাজলের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওের গোলাবাড়ি এলাকায় গিয়ে কথা হয় তার বাবার সাথে।বাড়িতে গিয়ে নিহত পুত্রবধু ও নাতিদের প্রসঙ্গ তুলতেই কান্না শুরু করেন কাজলের বাবা। পুত্রবধূ এবং নাতি নাতনীদের ছাড়া কেমন কাটালেন বিগত ঈদ?- এমন প্রশ্নে চোখ মুছেন রেজওয়ানের বাবা।নাতনিদের ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন এখন কি আর আমাদের সেই ঈদ আর ঈদের খুশি আছে? সব কেড়ে নিয়েছে ওই পাষণ্ডরা।
তবে কাজলের বাবার এখন একটাই কথা তারা যেন এই হত্যা মামলার অতিদ্রুত সু বিচার দেখে যেতে পারেন।
এ বিষয়ে প্রবাসী রেজওয়ান কাজল প্রতিদিনের সংবাদ এর প্রতিনিধিকে বলেন, স্ত্রী সন্তানকে হত্যার ১৮ মাস পূর্ণ হতে চলেছে। তাও যেন কষ্ট কোনোভাবেই কমছে না। যত দিন যাচ্ছে, স্ত্রী-সন্তানের কথা তত বেশি মনে পড়ছে। আমরা আশা করি, হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয় এবং রায়ে আসামিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভিস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন,মামলাটির তদন্ত সম্পূর্ণ শেষ পর্যায়ে আইনগত জটিলতার কারণে একটু বিলম্ব হয়েছে। খুব দ্রুতই মামলার চার্জশিট দেয়া হবে।