বগুড়া প্রতিনিধি:
বগুড়ার গাবতলীতে নৈশ প্রহরীদের হাত-পা বেঁধে তিন মার্কেটে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত দলের প্রধানসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। রোববার রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- টাঙ্গাইল জেলার সামছুল উদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন(৩৫) , একই জেলার ইসমাইল হোসেনের ছেলে আব্দুল হালিম মিয়া(২৮), ময়মনসিংহ জেলার মৃত বিল্লাল হোসেনের ছেলে আলী হোসেন(৫৬), নাটোর জেলার কানু মুন্সির ছেলে সুমন মুন্সি(২০) এবং একই জেলার মৃত আব্দল গনির ছেলে হুমায়ুন কবির(৩৫)। এদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন ডাকাত দলের প্রধান এবং বাকি সবাই সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। এসময় তাদের কাছ থেকে গুলিসহ বিদেশী পিস্তল, দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়। গত ২২ শে নভেম্বর সোমবার দুপুরের র্যাব-১২ বগুড়ার পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৬ নভেম্বর বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা বাজারে তিনটি মার্কেট; যথাক্রমে মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেটে অস্ত্রের মুখে নৈশ প্রহরীদের হাত পা ও মুখ বেঁধে মার্কেট সমূহের তালা কেটে ৯টি দোকানে দুধর্ষ ডাকাতি করে। এসময় তারা স্বর্ণালঙ্কার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড়, মোবাইলসহ প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ লুট করে। ঘটনার পরেরদিন ৭ নভেম্বর দোকানের মালিকদের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্ত, সিসিটিভি ফুটেজ এবং নৈশ প্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয় র্যাব।
এরই ধারবাহিকতায় র্যাব-১২ বগুড়া ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাতদলের প্রধান দেলোয়ারসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। অভিযানে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ০১টি ম্যাগাজিনসহ পিস্তল, ০৪ রাউন্ড গুলি, ০১টি বোল্ট কাটার, ০২টি রাম দা, ০৩টি শাবল, ০২টি ছুরি, ০১টি কাঁচি, ১০টি লাঠি, ০১টি হাতুড়ী ও ০১টি টর্চ লাইট ও ০১টি ট্রাক উদ্ধার করা হয়।
এর পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির সময় লুন্ঠিত মালামাল সমূহের মধ্য হতে স্বর্ণের ৩টি রুলির বালা, ৩টি নাকফুল, ১৫টি রুপার নূপুর, ০২টি পিতলের বেঙ্গল চুড়ি, ইমিটেশনের ০৩টি গলার হার, ০৪ টি গলার চেইন, ০৩ জোড়া কানের দুল, ০১টি বড় আংটি, ০১টি ছোট আংটি ও ০৩ জোড়া হাতের চুড়ি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তাদের নিকট হতে কাপড়ের হতে লুন্ঠনকৃত বিপুল পরিমাণ বস্ত্র সামগ্রী (৬২ পিস থ্রী-পিস, ১৪১ পিস শাড়ী, ৮৫ পিস গেঞ্জি, ০৯ সেট প্যান্ট পিস, ০৫টি ধূতি কাপড়, ১০টি ট্রাউজার ও ১০টি ব্যাগ) উদ্ধার করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ডাকাত দলের সরদার দেলোয়ারের নির্দেশে তার দলের ০২ জন সহযোগী গ্রেফতারকৃত হালিম ও সুমন গত ২৬ এবং ২৭ অক্টোবর দুর্গাহাটা বাজারে যায়। এসময় তারা মূল্যবান সামগ্রীসহ দোকান, রাত্রিকালে নৈশ প্রহরীর সংখ্যা ও অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শেষে দেলোয়ার এবং কবির ডাকাতির বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। দেলোয়ার ও কবির ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের একত্রিত করে এবং পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাত দলের ৯ জন ঘটনার আগের দিন বিকেলে সাভারের নবীনগরে একত্রিত হয়ে বগুড়ার গাবতলীর উদ্দেশে ট্রাকে করে যাত্রা করে। যাত্রাপথে আরো কয়েকজন সিরাজগঞ্জ এবং বগুড়া হতে তাদের সাথে যুক্ত হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক মোট ১২ জনের এই ডাকাত দলটি ০২টি ভাগে বিভক্ত হয়ে গাবতলীর দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির কাজ সম্পন্ন করে। ডাকাতদের ০১টি দল বাজারে পাহারারত তিনজন নৈশ প্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এসময় অপর দলটি পূর্ব হতে রেকি করা তিনটি মার্কেটের নয়টি দোকান এর তালা ভেঙে দোকানের ভিতর রক্ষিত মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী লুট করে।
র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানী কমান্ডার সোহরাব হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতি করে সাভার এর নবীনগরে প্রত্যাবর্তনকালে লুণ্ঠনকৃত মালামাল এর মধ্যে গার্মেন্টসের কাপড়ের আইটেম সমূহ একটি মার্কেটে বিক্রি করে। ডাকাতিকালে প্রাপ্ত টিভি, মোবাইল এবং অর্থ তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। এছাড়াও বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার তারা ঘটনার পরদিন অন্য ০২ টি মার্কেটের জুয়েলার্সের দোকানে বিক্রি করে বলে জানায়।
তিনি আরও জানান, গ্রেফাতারকৃত ৫জনই পেশায় ডাকাত। তারা নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ চুরি এবং মাদকের মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।