আবু হেনা মোস্তফা জামান, রাজশাহী:
রাজশাহী কোটস্টেশনের দিক থেকে হুইসেল বাজিয়ে একটি ট্রেন দ্রুত ছুটে আসতে থাকে। তাতে অল্পের জন্য বড় দূর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পায় একটি প্রাইভেটকার। ঘটনাটি ঘটে রাজশাহীর সিটিবাইপাস (ঘোড়াচত্বর) গেটে।
প্রতক্ষ্যদশিরাা জানান গেট ফেলার মূহুর্তে একটি প্রাইভেটকার জোরকরে রেল-লাইন পার হবার সময় কারটির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় প্রাইভেটকারটির অর্ধেক অংশ রেল লাইনের ওপর দেখে উপস্থিত পথচারীসহ অন্যান্য গাড়ির যাত্রীরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। সবাই বারবার পশ্চিমের দিকে তাকাচ্ছিল। দেখছিল, কোনো ট্রেন এসে পড়লো কি না! এভাবেই মিনিট দুই কাটে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায়। এরপর রেলের ওপর থাকা প্রাইভেটকারের চাকা দুটি কোনোরকমে রেললাইন থেকে নিরাপদে সামনে সরে আসে। আর ঠিক তখনই ট্রেনটি রেলগেইট অতিক্রম করে।
স্থানীয় দোকানদার ও অধিবাসিরা জানান, গেটম্যান গেট ফেলছে ধমক দেন মটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চালক। এই বেটা এত আগে গেট ফেলিস ক্যান, মেরে গাল ফাটাবো। গাযের জোরে দেমাক দেখিয়ে লাইন পার হন তারা। যান চালকদের গেটম্যানদের এমন আচরন সব রেল গেটেই।
দেখা গেছে, প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেন আসার ৪-৫ মিনিট আগেই দুপাশে ব্যারিকেড ফেলে যানবাহনের গতিরোধ করা হয়। কিন্তু সে মহুর্তে অনেক গাড়ি ব্যারিকেড ফেলার আগে তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে। শুধু যানবাহনই নয়, ট্রেনের লম্বা বাঁশি শোনার পরও পথচারীরা তড়িঘড়ি করে লেভেল ক্রসিং হন।
রেলের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ছয় বছরে রেলে দূর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৫ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জনই প্রাণ হারিয়েছেন লেভেল ক্রসিংয়ে। গত বছর মারা গেছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে ৩৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে লেভেল ক্রসিংয়ে। রেলপথে মুখোমুখি সংঘর্ষ, পেছন থেকে ট্রেনের ধাক্কা, ট্রেন থেকে কোচ আলাদা হয়ে যাওয়া, ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা, সংকেত অমান্য ও লাইনচ্যুতির খবর হরহামেশাই চোখে পড়ে। এর মধ্যে পথচারীদের অসচেতনতার কারণে ট্রেনের ধাক্কায় অনেকের প্রাণহানি হয়ে থাকে।
রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, সারাদেশে মোট লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৬১টি। এর মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ৩২১টির। এসব ক্রসিংয়ের বেশিরভাগই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়কে। আরও আছে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সড়কে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের ৮২ শতাংশ লেভেল ক্রসিংই রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়।