বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ার নন্দীগ্রামে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ডিউটি ফাঁকি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসকরা (ডাক্তার) বিজরুল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাসে পাঁচদিন হাজিরা দেন। বাকি দিনগুলোতে ব্যক্তি পরিচালিত ক্লিনিক ও বিভিন্ন জেলায় ব্যক্তিগত চেম্বারে সময় দিচ্ছেন। অন্যদিকে ২০ শয্যা হাসপাতালে নিয়মিত ডিউটিতে থাকার কথা থাকলেও দুই চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। এছাড়া ৫ জন চিকিৎসকের পদায়ন থাকা সত্ত্বেও উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে ৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিজরুল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (সরকারি হাসপাতাল) বর্তমান ডাক্তার সংখ্যা ২৫জন। এরমধ্যে দিনে ডিউটি চারজনের। তারা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ১জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১জন, গাইনী বিশেষজ্ঞ ১জন ও অ্যানেসথেশিয়া ১জন। ২০ শয্যা হাসপাতালে ৫জন ডাক্তারের পদায়ন রয়েছে। তাদের মধ্যে ডা. দিলরুবা বেগমকে ইমার্জেন্সি ডিউটি (রোস্টার) হিসেবে ২০১৭ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তিনি ২০ শয্যা হাসপাতালে ৫ বছর অনুপস্থিত। হাসপাতালে পড়ে আছে এক্স-রে যন্ত্র। ইতিপূর্বে এই হাসপাতালে প্রসূতিদের চিকিৎসা হলেও বর্তমানে সেই ব্যবস্থা নেই।
যেকারণে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে পৌর সদরে ব্যক্তি পরিচালিত ফাতেমা ক্লিনিকে প্রসূতিরা ভিড় করছেন। কারণ সেখানে মাসে ১০দিন রোগী দেখেন এবং অপরাশেনসহ চিকিৎসা দেন ডা. দিলরুবা। তিনি বিজরুল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাসে ৫দিন হাজিরা দেন। এই চিকিৎসক ৫বছর অনুপস্থিত থাকা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাসে ৫দিনের ইমার্জেন্সি ডিউটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ২০ শয্যায় শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ব্যতিত মাসে ২৫ দিন ডিউটি থাকার কথা থাকলেও আরেক চিকিৎসক শিউলি ইয়াসমিন সপ্তাহে এক-দুদিন আসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজরুল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমার্জেন্সি ডিউটিতে থাকেন সকালে ১জন, দুপুরে একজন ও রাতে একজন ডাক্তার। অথচ তিনজনের জায়গায় ডিউটিতে থাকেন একজন। উপজেলার ৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫ জন ডাক্তারের পদায়ন রয়েছে। তারা কেউই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বসেন না। সেগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে ডাক্তার পাওয়া যায়নি।
সবাইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমার্জেন্সি ডিউটি করাচ্ছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। যা প্রকাশ্য অব্যবস্থাপনা। অ্যানেসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. সামিউল হক এবং গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মঙ্গলা চিত্রলেখার বিজরুল হাসপাতালে শুক্রবার ব্যতিত মাসে ২৫দিন উপস্থিত থাকার কথা। তাদের দুজনকেই নিয়মিত অফিসে পাওয়া যায় না।
এ উপজেলার ২৫জন চিকিৎসকের মধ্যে প্রায় ১৪ জন অনুপস্থিত থাকলেও মাসের যেকোনো দিন হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে রেজিস্ট্রার হাজিরাতে স্বাক্ষর করার তথ্য রয়েছে। ২০২২ সালের শুরু থেকে পাঁচ মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়মিত বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) হাজিরা এবং রেজিস্ট্রার হাজিরা যাচাই করলেই অনিয়মের প্রমাণ মিলবে বলেও মন্তব্য করেন জনপ্রতিনিধিরা।
অপরদিকে হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া পুরাতন মালামাল গত ২ মে বিজরুল বাজারের কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের নিচ তলা মার্কেটের ভেতর থেকে উদ্ধার ঘটনার এক মাসেও থানায় মামলা দায়ের করা হয়নি। এই চুরিকান্ডের সঙ্গে হাসপাতাল কর্মচারিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলছেন স্থানীয়রা।
নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া পুরাতন মালামাল উদ্ধারের একমাসেও কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করেনি। বারবার বলেছি, তারা মামলা করেনি।
চুরির ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন দাবি করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল বলেন, বিষয়টি এখন ওসি, ইউএনও দেখবেন। ডাক্তারদের ডিউটি প্রশ্নে তিনি বলেন, ডিজি অফিস থেকে অর্ডার ও সিভিল সার্জনের নির্দেশে সব ডাক্তারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটি করানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ শফিউল আজম বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও যেসব ডাক্তার ডিউটি ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।