কুষ্টিয়া অফিস ॥
আজ ৩০-৭-২০২২ ইং : ‘বাঘ আমাদের অহঙ্কার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’ এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে কুষ্টিয়ায় বিবিসিএফ এর বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে শনিবার বিকালে শহরের হাসপাতাল রোড় এলাকায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন বিবিসিএফ এর উদ্যোগে শহরের হাসপাতাল রোড় এলাকায় (বিবিসিএফ) কুষ্টিয়া জেলার কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বিবিসিএফ এর সহ-সভাপতি ও মানুষ মানুষের জন্য কুষ্টিয়ার সভাপতি শাহাবউদ্দিন মিলন, বিবিসএফ এর সদস্য ও কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি এস আই সোহেল, বিবিসিএফ কুষ্টিয়া জেলা ও মানুষ মানুষের জন্য কুষ্টিয়ার সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক নাব্বির আল নাফিজ, সাংবাদিক ওয়াহিদ ইউসুফ খান লিটন, সদস্য আরিফ হোসেন, আশিকুর রহমান আবির, সুজন মাহমুদ,একরামুল ইসলাম জনি, ইমাম হোসন সোভন প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, হিংস্র মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে বাঘ বৃহত্তর। সারা পৃথিবীতে বাঘের ঠিকে থাকার সংগ্রাম চলছে অহর্নিশ। যে সবক কারনে পৃথিবীতে বাঘের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে তার কয়েকটি প্রধান কারণ নিম্নরূপঃ
১। আবাসস্থল সংকট
২। খাদ্যের উৎস সংকোচন
৩। বাঘ হত্যা, শিকার ও পাচার
৪। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানো। এ ছাড়াও আরো বহু কারন জড়িত আছে বাঘ বিপন্নের সাথে। বিগত শতাব্দীতে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লক্ষ। মানুষ নামক মস্তিষ্ক উন্নত প্রাণীটির দাপটে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হতে হতে সেই সংখ্যা এসে দাড়িয়েছিল মাত্র তিন হাজারের নিচে। বাঘের ন্যায় এমন শৌর্যবির্যের অধিকারী প্রানীটির এ করুণ দুর্দশা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল বিগত দশকে। তাই ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত হয় Global Tiger Initiative এর রাস্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মেলন। বাংলাদেশের পক্ষে এ সম্মেলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও ঘোষণার সূত্র ধরে প্রতিবছর জুলাই মাসের ২৯ তারিখে উদযাপন করা হয় বিশ্ব বাঘ দিবস। এবছরের প্রতিপাদ্য “বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার”।একসময় পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বাঘের সগর্ব উপস্থিতি ছিল। সময়ের পরিক্রমায় বাঘ বিলুপ্ত হতে হতে এখন মাত্র ১০ টি দেশের প্রকৃতিতে বাঘের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। ২০১০ সালের সেন্ট পিটার্সবার্গ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণের ঘোষণা ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তেরটি বাঘ সমৃদ্ধ রাস্ট্রের মধ্যে বিগত ১২ বছরে তিনটি দেশ হতে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে পৃথিবীতে বর্তমানে বাঘ সমৃদ্ধ রাস্ট্রের সংখ্যা দশ।তবে দুঃসংবাদের মধ্যেও সুখের কথা হলো বাঘ সমৃদ্ধ দেশ সমুহে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার হাজারে উন্নীত হয়েছে। এ সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ক্রমে অগ্রগতির সোপানে বাংলাদেশও অংশিদার। বিগত ২০১০-২০১৬ সালের মধ্যে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১১৪ টিতে উন্নীত হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত আছে। আগামী শীত মৌসুমে আবারো সুন্দরবনে বাঘ গননা করা হবে। তবে ইতোমধ্যে সুন্দরবন ভ্রমণকারী ও ফটোগ্রাফার দের দেওয়া তথ্যে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে আশাব্যাঞ্জক সুখবরের জন্য অপেক্ষা করছি। ইতিহাসে প্রথম বারের মতো এই ২০২২ সালে সুন্দরবনে ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরায় এক ফ্রেমে ৪/৫ টি বাঘের ছবি ধারনের তথ্য নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাছাড়া বর্তমান সুন্দরবন ব্যবস্থাপনার নিবিড়তা বিবেচনায় অতিতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সুন্দরবন ভালো আছে মর্মে সর্বমহলের সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বনবিভাগ।বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এককালে বাঘের উপস্থিতি ছিল। আবাসস্থল সংকটের কারণে এখন বাঘ শুধুমাত্র সুন্দরবনের সীমিত হয়েছে। সুন্দরবনের ধারণ ক্ষমতা বিশ্লেষণে ২০০ টি বাঘের বসতি স্থাপন ও টিকে থাকার কথা বিশেষজ্ঞগণ জানান। সেই হিসেবে আরো কিছু বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। বনবিভাগের বর্তমান নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা সেক্ষেত্রে জাতিকে গৌরবোজ্জ্বল আলো দেখাবে।সুন্দরবন ছাড়াও বাঘের দ্বিতীয় আবাস হিসেবে পার্বত্য বনাঞ্চলের কথা বিবেচনা করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞগন মতামত ব্যক্ত করেছেন। বৃহত্তর পার্বত্য বনাঞ্চলের মধ্যে সাঙ্গু-মাতামুহুরী, রাইংখ্যং রিজার্ভ এবং কাচালং-মাচালং বনাঞ্চলে বিশেষ ও নিবিড় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাঘের বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেম সমৃদ্ধকরণের পক্ষে যুক্তি প্রকট আকারে উপস্থাপিত হয়েছে। বাঘ সংরক্ষণের বহুমাত্রীক সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধিকরণ। সুন্দরবন সহ দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশর বনাঞ্চলে বাঘ ও বন্যপ্রাণী তথা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জাতির কাঙ্ক্ষিত সীমা অতিক্রম করুক, এ প্রত্যাশায় চেয়ে রই অনাগতের পানে।