মেহেরপুরের গাংনীতে প্রতিনিয়তই ঘটছে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা। এ এলাকায় গত দশদিনে চুরি হয়েছে সাতটি ট্রান্সফরমার। এতে করে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে চাষিরা। অন্যদিকে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প মালিকদের পড়তে হচ্ছে লোকসানে।
চুরি যাওয়া সাতটি ট্রান্সফরমারের আওতায় প্রায় ৭৫০ বিঘার বেশি কৃষি আবাদি জমি আছে। রাত জেগে পাহারা ও নজরদারি বাড়িয়েও মিলছে না এর সমাধান। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছেন গাংনী পুলিশ।
জানা গেছে, ১ নভেম্বর রাতে উপজেলার দেবীপুর ডিপের মাঠে তিনটি ও ১০ নভেম্বর দিনগত রাতে দেবিপুর-তেরাইল মাঠে চারটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। চুরি যাওয়া সাতটি ট্রান্সফরমারের আওতায় থাকা জমিগুলোতে এখন সেচ না দিতে পারলে উঠতি ফসলের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষিত চোরেরা এসব ট্রান্সফরমার চুরি করছে। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এ কাজে জড়িত বলেও অভিযোগ চাষিদের।
বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের মালিক জাকির হোসেন বলেন, মাঠে আমনের আবাদ চলছে। এই মুহূর্তে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় মাঠের ফসল নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অধিকাংশ ধানে পানি দিতে হবে। পানি না দিলে ধানে চিটা পড়ে যাবে। এতে কৃষকের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন এবং ফলনেও শঙ্কা দেখা দেবে।
বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের মালিক ওসমান আলী বলেন , গভীর রাত পর্যন্ত পাহারা দিয়ে বাড়ি যাবার পর সকালে ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেছে।
ট্রান্সফরমার মালিক ও কৃষকদের অভিযোগ, মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠে যারা ট্রান্সফরমার চুরি করতে পারে তারা কোনো সাধারণ মানুষ নয়। তাদের এ কাজের প্রশিক্ষণ আছে। তারা হয়তো পল্লী বিদ্যুতের কাজ করে। না হয় ঠিকাদার থেকে শুরু করে ডিস লাইনে যারা কাজ করে তারা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, ট্রান্সফরমার চুরি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। এ মুহূর্তে সেচ না দিতে পারলে ফলন কমে যাবে। তাছাড়া আগামীতে নতুন ফসলেরও আবাদে দেখা দেবে নানা প্রতিবন্ধকতা।
মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বামন্দী সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (ও এন্ড এম) মো. হানিফ রেজা বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। চাষিদের যাতে কৃষি খাতে কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যে চক্রটি চুরি করছে তাদের বের করাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, যারা পল্লী বিদ্যুৎ এ কাজ করে, ঠিকাদার থেকে শুরু করে ডিস লাইনের যারা কাজ করে এদের একটা চক্র থাকতে পারে। চোর চক্র ট্রান্সফরমারের তামার তার খুলে নেয়। চুরি হলে একদিকে যেমন কৃষকের ক্ষতি তেমনি পল্লী বিদ্যুতেরও ক্ষতি। ট্রান্সফরমার একবার চুরি হলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ৫০% ভর্তুকি দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। এই বিষয়ে সবার সহযোগিতা দরকার। আমরা এই বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েছি।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে কৃষকে মাঠে থাকা বৈদ্যতিক ট্রান্সফরমার চুরি ঘটনায় জড়িতদের খোঁজা হচ্ছে।