বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় বিপন্ন প্রজাতির একটি শকুন উদ্ধার করেছেন শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের (তীর) সদস্যরা। কয়েকদিনের অনাহারে শকুনটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) উপজেলার মুরাদপুর গ্রাম থেকে শকুনটি উদ্ধার করা হয়। পরিচর্যার পর সুস্থ হলে দিনাজপুরের সিংড়া ফরেস্টের শকুন পরিচর্যা কেন্দ্রে সেটিকে হস্তান্তর করবেন তীরের সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শনিবার সন্ধ্যার দিকে বিশালাকার একটি পাখি ফসলের জমিতে নামে। এরপর সেটি আর তেমন উড়তে পারছিল না। বিষয়টি টের পেয়ে মুরাদপুর গ্রামের কিছু যুবক ধাওয়া করে পাখিটি ধরেন।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা পাখিটিকে শকুন হিসেবে শনাক্ত করার পর যুবকরা বিষয়টি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে জানান। হেল্পলাইন থেকে বিষয়টি বাংলাদেশে শকুন নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ও বন বিভাগকে জানানো হয়। পরে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক বগুড়া অঞ্চলে পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তীরকে সেটি উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দায়িত্ব পেয়ে তীর সভাপতি রিফাত হাসান, সাবেক সভাপতি রাকিবুল হাসান, সহ-সভাপতি মুকিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক হোসেন রহমানসহ চার সদস্যদের উদ্ধারকারী দল ওই গ্রামে যায়। তারা গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে শকুনটি নিজেদের হেফাজতে নিয়ে বগুড়ায় ফেরেন।
তীর সভাপতি রিফাত হাসান বলেন, বছরের এই সময়ে (শীতকালে) হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন এদেশে আসে। দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে গিয়ে ক্লান্ত ও খাদ্যাভাবে দুর্বল হয়ে তারা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে পড়ে। তখন এসব শকুনের বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরই তীর সদস্যরা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে শকুন উদ্ধারের কাজে বন বিভাগকে সহায়তা করেন। এবছর এরইমধ্যে তিনটি শকুন উদ্ধার করেছেন তীর সদস্যরা। উদ্ধার করা শকুনগুলো দিনাজপুরের সিংড়া ফরেস্টের শকুন পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
উদ্ধার করা শকুনের বিষয়ে তীরের উপদেষ্টা ও বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম ইকবাল বলেন, এটি হিমালয়ান গৃধিনী জাতের শকুন। শকুনকে প্রকৃতির ঝাড়ুদার বলা হয়। বড় ডানার বৃহদাকার এই পাখি তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অধিকারী ও মৃত প্রাণী ভক্ষণকারী। শকুনই একমাত্র পাখি যারা রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে এবং অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, খুরারোগের সংক্রমণ থেকে জীবকূলকে রক্ষা করে।
তিনি জানান, আইইউসিএন-বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, দেশে সর্বশেষ ২০১৪ সালের শকুন নিয়ে শুমারির তথ্য মতে, দেশে মোট ২৬০টি শকুন রয়েছে। সে হিসাবে শকুন এখন বিপন্ন প্রজাতির পাখি।