লোকসান দেখিয়ে খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। লিজের মাধ্যমে কয়েক মাসের মধ্যে পাটকলগুলো ফের চালুর কথা থাকলেও গত আড়াই বছরে তা পারেনি সরকার। বন্ধ পাটকলে অযত্ন-অবহেলায় এখন নষ্ট হচ্ছে ৫ হাজার তাঁত ও অন্যান্য যন্ত্র। রক্ষণাবেক্ষণে মাঝেমধ্যে দায়সারাভাবে যন্ত্রগুলো চালু করা হলেও এ খাতে নেই পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ। এতে পাটকলগুলো ফের চালু করা হলে একই যন্ত্র দিয়ে উৎপাদনে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) থেকে জানা যায়, খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম, জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল ২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে চাকরি হারান ৩৩ হাজার ৩০৬ শ্রমিক-কর্মচারী। এসব পাটকলে তাঁত মেশিন রয়েছে মোট ৫ হাজার ৮৩টি। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিলে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ১৩৮টি। এ ছাড়া প্লাটিনাম জুট মিলে ৯৫৭টি, খালিশপুরে ৮৯১টি, স্টারে ৭৭০টি, জেজেআইতে ৪৬৬টি, ইস্টার্নে ২৭৫টি, আলিমে ২৫০টি, দৌলতপুরে ২৫০টি এবং কার্পেটিংয়ে ৮৬টি তাঁত রয়েছে।
সরেজমিন সোমবার ক্রিসেন্ট জুট মিলে দেখা যায়, পুরো পাটকলে ২-৩ জন নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া কেউ নেই। আগের চিরচেনা কোলাহলের পরিবর্তে চারদিক সুনসান। তালা খোলার পর মিলের ২ নম্বর কারখানার ভেতরে দেখা যায়, তাঁতগুলোতে ধুলা পড়েছে। কোনো কোনোটিতে রয়েছে মাকড়সার জাল। ছাদের পলেস্তারা খসে নিচে পড়ছে। কিছু কিছু যন্ত্রে এরই মধ্যে মরিচা পড়েছে।
প্লাটিনাম জুট মিল ট্রেড ইউনিয়ন-সিবিএর সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান জানান, মিলগুলো বন্ধের সময় বিজেএমসি তিন মাসের মধ্যে আধুনিকায়ন করে লিজের মাধ্যমে চালুর আশ্বাস দিয়েছিল। লিজ দিতে কয়েক দফা দরপত্র আহ্বানও করা হয়েছে। তবে কোনো পাটকলই চালু হয়নি। কবে হবে তাও অনিশ্চিত। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিল বন্ধ থাকায় তাঁতসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত মিলগুলো চালু করা না হলে পরে এই যন্ত্র দিয়ে আর উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে না।
একাধিক শ্রমিক অভিযোগ করেন, বিজেএমসির আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতার অভাবে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রগুলো অযত্নে নষ্ট হওয়ার পথে।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, যে কোনো যন্ত্র দীর্ঘদিন ফেলে রাখলে তা নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। ফলে ভবিষ্যতে এ যন্ত্রগুলো কোনো কাজে আসবে কিনা তা নিয়ে দিন দিন অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান খান মো. কামরুল ইসলাম বলেন, মিলগুলো লিজের মাধ্যমে আবার চালু করতে চেষ্টা করছে বিজেএমসি। এর মধ্যে প্রতি ৩ মাস পরপর যন্ত্রগুলো মেইনটেন্যান্স করা হচ্ছে।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয় কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী বলেন, যন্ত্রগুলো মাঝেমধ্যে চালু করে দেখা হচ্ছে। তবে যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার তা অর্থের অভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেন, এভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে যন্ত্রগুলো আর কোনো কাজে আসবে না।