Sunday , November 10 2024
You are here: Home / ঢাকা ও ময়মনসিংহ / আজ শুরু লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী তীর্থ স্নানোৎসব
আজ শুরু লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী তীর্থ স্নানোৎসব

আজ শুরু লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী তীর্থ স্নানোৎসব

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাপমোচন পুণ্যস্নানার্থে এক অনন্য তীর্থ ভূমি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ ও বন্দর উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের লাঙ্গলবন্দে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ধর্মীয় পবিত্র মহাতীর্থ অষ্টমী স্নানোৎসব। শুক্ল তিথি অনুযায়ী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯টা ১৭ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড স্নানের লগ্ন শুরু হবে। দুইদিনব্যাপী এ স্নানোৎসব শেষ হবে বুধবার দিবাগত রাত ১০ টা ৪৭ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে।

ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ ও বন্দরের কোল ঘেষে লাঙ্গলবন্দ তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আদি ব্রহ্মপুত্র নদে যুগ যুগ ধরে এ স্নানোৎসব চলে আসছে। আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন লাঙ্গলবন্দ তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

স্নানোৎসব উদ্বোধন করবেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা।

ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কুদরত এ খোদা জুয়েলের নেতৃত্বে ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কার লাঙ্গলবন্দ এলাকায় ১৯টি ঘাটলায় কাপড় পাল্টানো, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবারহ, স্নানঘাটে বৈদ্যুতিক বাতি ও পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের আশেপাশের এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানা ও ডাইংয়ের রাসায়নিক বস্তুমিশ্রিত বর্জ্য দূষণ পানি নদীতে পড়ছে। এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিযোগ।

ব্রহ্মপুত্রের জলের মাধ্যমে পাপমুক্ত হয়েছিলেন বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম মুনিকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন মনে করেন, মহাভারতের বর্ণনামতে পরশুরামমুনি পাপমুক্তির জন্য ব্রহ্মপুত্র নদে যে স্থানের জলে স্নান লাঙ্গলবন্দে অবস্থিত। সেই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পূণ্যের। এ স্নানের ফলে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পাপমোচন হয়। এ বিশ্বাস নিয়ে সুদীর্ঘ কাল ধরে এ স্নানে অংশ নেয়ার জন্য উপমহাদেশের এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ লাঙ্গলবন্দে সমাবেত হন। পাপস্খলনের এ উৎসবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ এসে এখানে সমাবেত হয়। পরশুরামের পাপ থেকে মুক্তি হওয়ার কথা স্মরণ করে শত শত বছর ধরে লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমী স্নান অনুষ্ঠিত হয়।

শ্রী শ্রী ললিত সাধুর আশ্রমের পূজারি ঝর্ণা রানী জানান, টোটাল ফ্যাশন গার্মেন্ট অ্যান্ড ডাইং কারখানার রংমিশ্রিত রাসায়নিক বর্জ্য পানি পাইপ দিয়ে নদে পড়ছে। এস্থানে স্নান করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দূষিত জলে স্নান করলে শরীরে চুলকানিসহ নানা সমস্য সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে স্থানীয় হিন্দু পরিবারের লোকজন ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করা বন্ধ করে দেয়।

লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন কমিটি নেতারা জানান, মালিবাগ এলাকায় অবস্থিত বাশার পেপার মিলের বর্জ্য এবং জামালউদ্দিন টেক্সটাইল ও ডাইংমিলের বর্জ্য খাল দিয়ে ব্রহ্মপূত্রে পড়ছে। নদেও জল লাল, নীল, কালো রং ধারণ করেছে। নদের জল থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। কলকারখানার বর্জ্যে পরিবেশ এখন চরম হুমকির মূখে পড়েছে। এ ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার দরকার।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কুদরত এ খোদা জুয়েল জানান, স্নান নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসক সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছেন। স্নান ঘাটগুলোতে কাপড় পাল্টানোর পর্যপ্ত ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক বাতি, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ, পূণ্যার্থীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ১০ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতালসহ পাঁচটি মেডিকেল টিম সর্বাক্ষণ থাকবে। এছাড়া পুণ্যার্থীদের উন্নত সেবা প্রদানে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু থাকবে।

কামতাল তদন্ত কেন্দ্রে ইনচার্জ ইন্সপেক্টর এইচ এম মাহমুদ জানান, স্নান এলাকার প্রবেশ পথে ১০টি চেকপোস্ট থাকবে। পয়েন্টে থাকবে সিসি ক্যামেরা, স্বেচ্ছাসেবক পাশাপাশি ১২০০ ফোর্স থাকবে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ভাবে দমন করা হবে।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!