Sunday , April 20 2025
You are here: Home / জাতীয় / চার ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ, ৫০টির বেশি কিডনি কেনাবেচা করেছেন আনিছুর
চার ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ, ৫০টির বেশি কিডনি কেনাবেচা করেছেন আনিছুর

চার ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ, ৫০টির বেশি কিডনি কেনাবেচা করেছেন আনিছুর

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে সক্রিয় অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের অন্যতম মূলহোতা মো. আনিছুর রহমানসহ (২৯) জড়িত পাঁচজনকে রাজধানী বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১। জিজ্ঞাসাবাদে আনিছুর র‍্যাবকে জানিয়েছে, চার বছরে তার মাধ্যমে ৫০টির বেশি কিডনি ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। 

র‌্যাব-১ জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা, বনানী ও মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আনিছুরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে করা চুক্তির এফিডেভিট কপি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে রাজিব (৩৩), সালাউদ্দিন তুহিন (২৭), এনামুল হোসেন পারভেজ (ডোনার) এবং সাইফুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ।

তিনি বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে সর্বহারা হচ্ছে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ। আইনবহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টের এ কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত। সম্প্রতি র‌্যাব সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন অনলাইন এবং অফলাইন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে।

জানা যায়, বিদেশে অবস্থানরত একেকজন কিডনি ক্রেতা জীবন বাঁচাতে ৪৫-৫০ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি ক্রয় করেন। এই টাকার মাত্র ৪-৫ লাখ টাকা পায় ডোনার। ৫-১০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের ভেতরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট এবং অন্যান্য প্রতারকদের মধ্যে। বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ভোগ করে বিদেশে অবস্থানরত কিডনি পাচার সিন্ডিকেট।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দারিদ্র্যসীমার নিচের অসহায় মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই চক্র। কখনও তারা বলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে একটির বেশি কিডনি দরকার নেই, কখনও মিথ্যা আশ্বাস দেয় যে চিকিৎসার খরচ তারা বহন করবে। টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে প্রায়ই অকর্মণ্য হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে অসহায় মানুষগুলো।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেল চারটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এমন একটি চক্রের মূলহোতা আনিছুর রহমানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চক্রটির কার্যক্রম সম্পর্কে র‌্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, চক্রটি চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। দেশে থাকা মূলহোতা আনিছ ঢাকায় বসে বিদেশে ডোনার পাঠানোর বিষয় তদারকি করে।

চক্রের তৃতীয় দলটির সদস্য আরিফ এবং তুহিন প্রথম দলের চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরে ঢাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট প্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। এসব বিষয় নিশ্চিত হলে ৪র্থ গ্রুপটির প্রধান ‘সাহেবানা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’ এর মালিক সাইফুল ইসলাম প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারাকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী প্রথম চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আনিছুর রহমান এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দর দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রবেশ করে এবং হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ-অবৈধ উপায়ে প্লেন বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।

চক্রের অন্যতম সদস্য সাইফুল ইসলাম ‘সাহেবানা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’ এর মালিক। তিনি কিডনি ডোনারদের পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট ব্যাংক এন্ডোর্সমেন্ট, মেডিকেল ডকুমেন্টস, ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে থাকেন। যেসব ডকুমেন্টের ঘাটতি থাকে, তাদের কাগজপত্র জাল জালিয়াতের মাধ্যমে প্রস্তুত করেন। ২০২১ সালে তিনি একবার র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, অন্য কোনো চক্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আমরা পাইনি। তবে দেশের অভ্যন্তরে তারা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি বেচাকেনা নিয়ে কাজ করছিল। চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কিডনি নিয়েছে।

মূলত এসব চক্র মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার কাজ করে আসছে। আমরা বেশকিছু পেজ নজরদারি করছি; ধারণা করছি এসব কাজে আরও বেশকিছু চক্র জড়িত। তাদেরকে ধরার পরই আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।

কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা অন্য কেউ চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে কি না, প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, না আমরা এমন কাউকে পাইনি। তাদের কাছে যেসব কাগজপত্র পেয়েছি সেগুলো জাল। এগুলো জাল-জালিয়াতির মাধ্যমেই তৈরি করেছে, যা দিয়ে ভিসা পাওয়ার ব্যবস্থা করতো। এর সঙ্গে কোনো হাসপাতালের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

একেক জনের সঙ্গে একেক ধরনের চুক্তি করে কিডনি প্রতিস্থাপন করতো, সেই টাকা কীভাবে ভাগ হতো? এমন প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাক আহমেদ বলেন, জানা গেছে প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ টাকা চুক্তি হতো। সেই টাকার মধ্যে যিনি কিডনি দিতেন তিনি চার থেকে পাঁচলাখ টাকা পেতেন। বাকি টাকা চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে বণ্টন হতো।

সম্প্রতি সরকারি একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে দেশের প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রতারণার বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। এই প্রতারণার সঙ্গে এই চক্রটি জড়িত কি না প্রশ্নে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, না, তাদের জড়িত থাকার এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!