Wednesday , March 19 2025
You are here: Home / অন্যান্য / মালঞ্চ নদী থেকেও যেন নেই!
মালঞ্চ নদী থেকেও যেন নেই!

মালঞ্চ নদী থেকেও যেন নেই!

ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর জেলা গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান নদী পদ্মার অববাহিকায়। আর এ জেলার বুক চিরে বয়ে চলেছে কুমার নদ। সালথা উপজেলার বাজার অতিক্রমকালে সৃষ্টি হয়েছে এর একটি শাখা নদী। যার নাম মালঞ্চ। এর আছে কয়েকশ বছরের প্রাচীন ইতিহাস। কিন্তু

ফরিদপুরের মালঞ্চ নদী সালথা উপজেলার গট্টিবাজারে কুমার নদ থেকে উৎপত্তি লাভ করে সিংহপ্রতাপ, গৌড়দিয়া, সলিয়া, সেনহাটি, খাগৈড়, গোয়ালপাড়া, গোবিন্দপুর ও দুর্গাপুর গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। বিভিন্ন জনপদ ও গ্রাম ছাপিয়ে নদীটি ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আবারও কুমার নদের সঙ্গে মিশেছে। এজন্য অনেকে এটিকে কুমার নদের অংশ মনে করেন। মাত্র ৩০-৪০ বছর আগেও মালঞ্চ নদী ছিল নানা জাতের দেশীয় মাছের সম্ভারে পরিপূর্ণ।

স্থানীয়রা সেই মাছ শুঁটকি দিয়ে সারাবছরের খাদ্যসংস্থানের জন্য রেখে দিতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে অনেককিছুর সঙ্গে মালঞ্চ নদীও তার আগের রূপলাবণ্য হারিয়েছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, নদীর এমন সুন্দর একটি নামই হারাতে চলেছে।

বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না, এ নদীর নাম মালঞ্চ। নদীর পাড়ে বেড়ে ওঠা বর্তমান প্রজন্মের অনেকে জানে না এর আসল নাম। ফরিদপুরের সরকারি-বেসরকারি নথিপত্রে কোথাও নেই মালঞ্চ নদীর কোনো অস্তিত্বের বিবরণ।

স্থানীয়রা জানান, শুকনো মৌসুমে খরায় পানি শুকিয়ে জেগে ওঠে মালঞ্চ নদীর উদোম শরীর। নদীটি সম্প্রতি খনন করা হয়েছে। এখন শুকনো মৌসুমে হাঁটু পানি থাকে কোথাও কোথাও। আবার বর্ষায় পানিতে ভরে ওঠে নদীর বুক। বর্ষায় মৌসুমে ফরিদপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট জাগ দেওয়া হয় এ নদীতে। পাটের পচা পানি নিয়েই বয়ে চলে নদী।

গ্রামের সহজসরল প্রকৃতির মতোই নদীর ছুটে চলা। এমন সুন্দর স্নিগ্ধতা জড়ানো এই নদী যেন সবার অগোচরে হারিয়ে যাচ্ছে।

মালঞ্চ নদীর নামকরণের সঙ্গে মিশে আছে এক করুণ শোকগাথা। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক সূধীর দত্ত উত্তম জানান, নবাবী আমলে সালথায় বড় জমিদার ছিলেন প্রতাপ সিংহ। তার মেয়ে যার নাম ছিল মালঞ্চ। নদীতে নৌকায় বাড়ি ফেরার সময় সে নৌকাডুবিতে মারা যায়। তার নাম অনুসারেই এ নদীর নাম হয় মালঞ্চ।

স্থানীয় বাসিন্দা শ্রাবণ হাসান বলেন, এমন একটি সুন্দর নামের নয়নাভিরাম নদী আছে আমাদের সালথায়। অথচ তেমনভাবে কখনো জানা হয়ে ওঠেনি। নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই এ নদীর নাম জানে না।

ব্যাংকে চাকরিরত হারুন-অর-রশীদ। যার বাড়ি সালথায়। তিনি বলেন, নিবিড় প্রকৃতির মাঝে বয়ে চলা মালঞ্চ নদীর অপরূপ দৃশ্য সৌন্দর্যপিপাসুদের আকৃষ্ট করে। নদীটি এখনো হারিয়ে যায়নি। তবে এ নদীর সুন্দর নামটি এখন হারাতে চলেছে।

ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ৬০ এর দশক থেকে ৮০ দশকেও এ নদীতে দেশীয় জাতের প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করে রাখা হতো। এটি কোনো রূপকথা নয় বাস্তব। সেই ভরা ঐশ্বর্যের মালঞ্চ নদী আজ শুধু তার নাব্যতাই হারায়নি, নামটিই হারাতে চলেছে।

স্থানীয়দের মতে, নদীমাতৃক বাংলাদেশে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আরও অনেক নদ-নদীর মতো মালঞ্চ নদীর রুপলাবণ্য ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কান্তি পান্না বালা বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকে এই নদীর নামই জানে না যা খুবই উদ্বেগজনক। তাই নদীটি রক্ষা যেমন জরুরি, তেমনি নদীর নামটিও সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ থাকা দরকার।

এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, এ নদীর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই প্রথম জানতে পেলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো। যদি সরকারি নথিপত্রে নদীর নাম ও তথ্য না থাকে তাহলে তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমাদের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, মালঞ্চ নদী সম্বন্ধে সেভাবে জানা নেই। আমরা সারাদেশের নদীর তথ্য হালনাগাদ করছি। যদি এটি নদীর শ্রেণিভুক্ত হয় তাহলে অবশ্যই নদনদীর তালিকাভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!