Thursday , January 23 2025
You are here: Home / অন্যান্য / ১২ বছরের আগে শিশুদের হাতে মোবাইল দেওয়া উচিত নয়
১২ বছরের আগে শিশুদের হাতে মোবাইল দেওয়া উচিত নয়

১২ বছরের আগে শিশুদের হাতে মোবাইল দেওয়া উচিত নয়

যমজ ছেলে সন্তানের জনক পংকজ সাহা। সন্তানদের অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি থেকে ফেরাতে শরণাপন্ন হয়েছেন চিকিৎসকের। বাধ্য হয়ে বাড়ির ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন করেছেন। প্রতিদিন অফিস শেষে নিজের মোবাইল আলমারিতে লুকিয়ে রাখেন। মোবাইল আসক্তি থেকে ফেরাতে সন্তানদের প্রচুর খেলনা কিনে দিয়েছেন। ফলে গত দুই মাস ধরে মোবাইলের কথা ভুলে গেছে তারা।

পংকজ সাহা রোটারি ক্লাব অব নোয়াখালীর সাবেক সভাপতি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমার যমজ সন্তান। আমরা যৌথ পরিবার যখন ছিলাম তখন আমাদের সন্তানকে রাখার মতো লোক ছিল। একক পরিবার হওয়ায় বাচ্চাদের রাখার মতো কেউ নেই। আমার স্ত্রী সংসার সামলাতেই কষ্ট হয়ে যায়। তাই বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দিয়ে রাখতো। পরবর্তীতে ডাক্তার আমার সন্তানদের হাতে মোবাইল দিতে নিষেধ করেছেন। এখন আমার বাসার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ। আমি অফিস থেকে বাসায় গিয়ে মোবাইল আলমারিতে লুকিয়ে রাখি। গত দুই মাস ধরে ওরা প্রায় মোবাইলের বিষয়টি ভুলতে বসেছে।

শুধু পংকজ সাহা নয়, এমন পরিস্থিতিতে রয়েছেন নোয়াখালীর অনেক অভিভাবক। জেলার অনেক শিশু-কিশোরের নিত্যসঙ্গী এখন মোবাইল ফোন। পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের চাপের মুখে ফেলে পড়াশোনার দোহাই দিয়ে মোবাইল ব্যবহার করছে শিশু-কিশোররা।

নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বিষাদ গণমাধ্যমকে বলেন, মোবাইল আসক্তি শিশুদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। নোয়াখালী জেলায় শিশুদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধাগুলো থাকার কথা ছিল তা কিন্তু তারা পাচ্ছে না। শিশুরা তাদের মানসিক বিকাশে সহায়ক হিসেবে তেমন কিছু পাচ্ছে না। আমার দুই বছরের শিশু, সেও মোবাইলে গেমসের প্রতি দুর্বল। আমরা তাদের সেই পরিবেশ দিতে পারছি না। নোয়াখালী জেলায় খেলার ও বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। স্টেডিয়ামের আশপাশের শিশুরা খেলাধুলা করতে পারলেও বেশিরভাগ শিশু খেলার মাঠ পাচ্ছে না। মোবাইল আসক্তির কারণে চোখের ক্ষতি হচ্ছে। কম বয়সে চশমা কিনে দিতে হচ্ছে।

নোয়াখালী নারী অধিকার জোটের সভানেত্রী লায়লা পারভীন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সমাজে সুস্থ বিনোদনের অভাব রয়েছে। সামাজিক পারিবারিক বিনোদনেরও অভাব রয়েছে। সাংস্কৃতিক চর্চা নেই, নাটকের চর্চা নেই, আবৃত্তির চর্চা নেই। ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে অনেকেই সন্তানকে এসব চর্চায় দিচ্ছেন না। শিশুদের মেধা বিকাশে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শিশুরা মোবাইল, ট্যাব ও কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকে। কোভিডের সময়ে আমরা এই আসক্তির মধ্যে ঢুকে পড়ি, যা থেকে আমরা আর বের হতে পারছি না। শিশুরা খাচ্ছেও না, ফলে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

ব্যবসায়ী মহিবুল হাসান রতন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাচ্চার বয়স ছয় বছর। কিন্তু মোবাইল ছাড়া খাবার খেতে চায় না। মোবাইলের মধ্যে ডুবে থাকে। মোবাইল নিয়ে গেলে খেতে চায় না, কান্নাকাটি করে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে তাও খেলাধুলা করার জায়গা আছে, তারা খেলাধুলা করে। কিন্তু শহরের দিকে খেলাধুলার জায়গা নেই, তাই তারা পুরাই আসক্ত হয়ে গেছে মোবাইলে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসরিন আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, মোবাইলটা হাতে পেলে আমার শিশু নানা কিছু শিখছে। মোবাইলের কার্টুনগুলোর মতো করে ছড়া বলে, কথা বলে। অনেক কিছু আছে যা আমি শেখাইনি। এতে আমার কাছে অবাক লাগে। তবে এর খারাপ দিকও আছে। কিছু করার নেই, কারণ একাই সন্তানকে লালনপালন করতে হয়। আমাকে চাকরিও করতে হয়, আবার সংসারও সামলাতে হয়।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আমরা দেখতে পাই শিশুদের মোবাইল আসক্তির বিষয়টি। এর জন্য বাবা-মা দায়ী বলে আমি মনে করি। কারণ বাবা অফিস থেকে ফিরেই মোবাইল হাতে নিয়ে নিজের ফেসবুক স্ক্রল করছে। শিশুর হাতেও একটা ফোন দিয়ে রাখছে। শিশুরা এতে মোবাইল ছাড়া খেতে চাচ্ছে না, মোবাইল ছাড়া পড়ছে না। এতে করে শিশুদের মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। সারাদিন মোবাইলে বিভিন্ন জিনিস দেখার কারণে চোখের ক্ষতি হচ্ছে, ব্রেইনের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের মাঠে খেলাধুলা করার কথা, তাদের সাংস্কৃতিক চর্চার কথা কিন্তু তাও হচ্ছে না। এখান থেকে আমাদের উদ্ধার হতে হলে একটা সামাজিক বিপ্লবের প্রয়োজন। বাবা-মা এখানে বেশি ভূমিকা রাখবে। বাবা-মাকে বেশি করে সন্তানকে সময় দিতে হবে। তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে হবে। তাদের কথাগুলো শুনতে হবে।

১২ বছরের আগে শিশুদের হাতে মোবাইল দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমি একজন আইন প্রণেতা এবং এদেশের একজন নাগরিক। আমার হিসেবে মা বাবা একটু সচেতন হলে আমি বলবো ১২ বছরের আগে শিশুদের হাতে মোবাইল দেওয়া উচিত নয়, না দেওয়াই ভালো। তাদের সামাজিক বোধগম্য ও মেন্টাল স্যাটিসফ্যাকশন না আসা পর্যন্ত মোবাইল না দেওয়াই উত্তম। ১২ বছরের আগে মোবাইল হাতে গেলে সেটি হয়ে যাবে খেলনার পুতুল, যখন তখন ব্যবহারের বস্তু এবং এটি তার পড়ালেখার অনীহার একটা কারণ হয়ে যাবে। মোবাইলে পড়ালেখা শিখতে গিয়ে সে খারাপ জিনিসগুলো দেখবে। সারা বিশ্বের খারাপ রাজনীতি শিখবে। সে চলে যাবে টিকটকে কিংবা খারাপ অ্যাপে। এসবে যারা কথা বলে তাদের থেকে ভালো কিছু শেখার নেই। অন্তত ১২ বছর পর্যন্ত বাবা-মায়ের সাবধানে থাকা উচিত, যেন বাচ্চারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারে।

একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র জয় যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলেছেন সেটা মানে হলো একটা লোক তার জীবন সাধনের জন্য যত রকম স্মার্ট হওয়ার কথা বলা হয়েছে সেটা। মোবাইলের মধ্যে পড়ে থাকলে স্মার্ট হওয়া যাবে না। স্মার্ট মানে ঘরে বসে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভালো কিছু শিখে ডলার ইনকাম করা। বাংলাদেশে থেকেও আমেরিকায় অফিস করা। এতে করে দেশের সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সব উন্নয়ন সাধিত হবে।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!