নূরুন্নবী বাবু :
পৌরসভার আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলররা একটি ওয়ার্ড থেকে এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা ৩টি ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হন। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করলেও সব ক্ষেত্রে নারী বিবেচনায় তাদের অবহেলা বা কোনো বৈষম্য করা যাবে না। এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা দৃশ্যমান নয়।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচিত হওয়ার পর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলরদের মধ্যে নাগরিক সেবায় কাজ করার তেমন পার্থক্য নেই। তাদেরও পুরুষ কাউন্সিলরদের মতো এলাকার উন্নয়নে ভুমিকা রাখার কথা। কিন্তু কোনো পরিপত্র না থাকায় সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলররা কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেন না। কাজের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা কম। ফলে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করা সম্ভব হয় না।
কুষ্টিয়া পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাহানাজ সুলতানা বনি অভিযোগ করে বলেন, একজন পুরুষ কাউন্সিলর একটি ওয়ার্ডের ভোট নিয়ে কাউন্সিলর হয় আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৩টি ওয়ার্ডের ভোট নিয়ে কাউন্সিলর হয়। তারা যেমন জনগণের কাছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে ঠিক তেমনি আমরাও জনগণকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসি। তাদের মত আমরাও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আমরা কোন জনগণকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করতে পারিনা। কারণ পুরুষ কাউন্সিলররা সব তাদের মনোনীত লোকদের সব সরকারি সহযোগিতা করেন। আর আমাদের এই সহযোগিতা করা থেকে বিরত রাখেন। জনগণ আমাদের কাছে আছে কিন্তু আমরা তাদের সরকারি কোন সহযোগিতা করতে পারি না। তারা আমাদের বকাবকি করতে করতে চলে যায়। তিনি আরো বলেন, এলাকার মানুষ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে এলেও তারা কিছু করতে পারেন না। এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে তারা একটু তৎপর হলেই পুরুষ কাউন্সিলররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৬,১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সামছুর নাহার মায়ার অভিযোগ, নারী কাউন্সিলরদের তিনটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করতে হলেও তাদের সম্মানী ভাতার পরিমাণ খুবই সামান্য। জনবলের অভাব আছে। বরাদ্দ অর্থের অভাবে সব ওয়ার্ডের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। নিজ নিজ দলের মধ্যে পুরুষ সদস্যরা চান না নারীরা এগিয়ে আসুক। উন্নয়ন কাজ দেখাশোনা করতে গিয়ে কোনো কোনো নারী কাউন্সিলরদের লাঞ্ছিত পর্যন্ত হতে হচ্ছে।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা জানান, নারী কাউন্সিলরদের কাজের পরিধি বর্তমানের চেয়ে আরো বাড়ানো, নাগরিক সেবায় তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, শুধু নামমাত্র কাউন্সিলর হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সংযুক্ত না রেখে শহর উন্নয়নে তাদের সরাসরি দায়িত্ব প্রদান, কাউন্সিলর কার্যালয় না থাকা, এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট কাজ ভাগ করে দেয়া, পুরুষ কাউন্সিলরদের মতো নারী কাউন্সিলরদেরও নিজ নিজ এলাকায় বিশেষ বাজেট প্রদান, নাগরিক দুর্দশা লাঘবে সরাসরি প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা প্রদান, মেয়রের সব কাজে অংশগ্রহণ করে দেশের উন্নয়নে সরাসরি ভুমিকা পালনের সুযোগ প্রদানসহ বর্তমানের চেয়ে আরো বেশি কার্যকর ভুমিকা থাকতে মন্ত্রীর সাহায্য চেয়েছেন নারী কাউন্সিলররা। একইসঙ্গে নামমাত্র কাউন্সিলরের অপবাদ থেকে পরিত্রাণ দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নাগরিকদের আসল প্রতিনিধি করতে অফিস বা কার্যালয় স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবিও জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের সবকটি পৌরসভায় নির্বাচিত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের শহর উন্নয়নে সংস্থার নিয়মিত কার্যক্রমে আরো সক্রিয় ও কার্যকর জনপ্রতিনিধি হিসেবে তৈরি করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।