Sunday , May 19 2024
You are here: Home / মতামত / করোনা কালীন চিন্তা-১ : সালাহ উদ্দিন
করোনা কালীন চিন্তা-১ : সালাহ উদ্দিন

করোনা কালীন চিন্তা-১ : সালাহ উদ্দিন

এই করোনায় এক ধরনের স্থবিরতা, অনিশ্চিতা ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। ফেসবুকে অনেক পরিচিত জনের মৃত্যু সংবাদ, জীবিকা হারানোর ভয়,মহামারির ভীতি এমনকি অবচেতন মনে নিজে আক্রান্ত হবার ভয় সব কিছু মিলে এক ধরনের উত্কণ্ঠায় আমাদের দিন কাটে। মানুষের বহু রৈখিক জীবনে এক ধরনের ছন্দ পতন ঘটেছে। চরম হতাশ একটা অবস্থা। এটাই এখন চরম বাস্তবতা। হতাশা মানুষের সুখ কেড়ে নেয়। এই সত্যটা আমরা সকলেই বুঝি। এই বোধের জায়গা থেকে এখন করনীয় কি সেটাই এই মুহুর্তে বড় প্রশ্ন।
মনস্তাত্ত্বিক ভাবে শক্তি অর্জন করাও করোনা প্রতিরোধের একটি পূর্ব শর্ত। আমরা আসলেই ভিতরে প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। দিন যত যাচ্ছে মনে হচ্ছে সমস্যা গুলো আরো কাছে চলে আসছে। এই অবস্থায় হাল ছেড়ে দেবার ও সুযোগ নাই। বেঁচে থাকার স্বাভাবিক সময় গুলোতেও আমরা যুদ্ধ করেছি। জীবনের বহুমাত্রিক জটিলতা সামাল দিয়ে টিকে ছিলাম। এখনো তাই। ধরন একটু ভিন্ন। যুদ্ধতো যুদ্ধই। নিরন্তর কিছু করে যাওয়া ই জীবন। মানুষের ইতিহাস যুদ্ধেরই ইতিহাস। মানব সভ্যতার জন্য মহামারীর সাথে যুদ্ধ নতুন কিছু নয়। প্রতিবারই মানুষই শেষ পর্যন্ত জিতেছে।

সার্বিকভাবে মানব সভ্যতা নিয়ে ভাবলেও আমরা নিজে ব্যক্তি সত্তাকেই প্রাধান্য দেই। মনে মনে ভাবি মানব সভ্যতা টিকে থাকবে কিন্তু আমি টিকে থাকবোতো? এমন চিন্তা অমূলক নয়। এটি আমাদের সহজাত ভাবনা। আমি মানেই তো আমার পৃথিবী। আমার অস্তিত্বই আমার পৃথিবী। আমি না থাকলেও পৃথিবী থাকবে। তাতে আমার লাভ নেই। আমার জন্যতো থকবেনা। এ কারণেই আমি কেন্দ্রীক এই ভাবনা চিরন্তন। এই আমি কেন্দ্রীক ভাবনা থেকেই জগতের সকল দর্শনের আবির্ভাব বলে আমার ধারনা। অস্তিত্ব বাদ, ভাব বাদ, বস্তুবাদ, ধর্মাশ্রীয় নানান মতবাদ সব কিছুই এই আমি কেন্দ্রীয়। আমি কে, আমি কোথায় ছিলাম আমি কোথায় যাব, আমি কেমন থাকবো সব কিছুই ব্যক্তির ভাবনা। এই ব্যক্তির ভাবনা ই প্রভাবিত করেছে বহু মানুষকে। জন্ম দিয়েছে নানা school of thought এর। এই প্রক্রিয়া চলমান। সভ্যতার ইতিহাসের মত পুরাতন এটি। আগামীতেও চলতে থাকবে। ওইসব অতি ধর্মাশ্রয়ী অথবা নাস্তিকতায় না গিয়ে একটা যৌক্তিক পদ্ধতি, চিন্তা বা চর্চার মাধ্যমে চলমান হতাশা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।
আমি স্বল্প গেয়ান সম্পন্ন মানুষ। মনোবিজ্ঞানের ছাত্র ও নই তবুও শুধু বন্ধু ও প্রিয়জনদের জন্য পরামর্শ হিসাবে এই লেখা। (বয়স বাড়লে মানুষ পরামর্শ দিতে পছন্দ করে তাই হয়তো ) এটি কাজে লাগতে ও পারে না ও লাগতে পারে। না লাগুক। তবুও পড়ুননা। বসে বসে ফেসবুকই তো দখছেন।

শুরুতেই বলবো চলুন ইতিবাচক হই। ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে। যুদ্ধ শুধু ধ্বংস ই করেনা। এক নতুন সমাজ ও বিনির্মান করে। এই মূহুর্তে আতংকিত না হয়ে বেঁচে থাকবো। শক্তি সঞ্চয় করবো।
আমার চিন্তার সমান ই আমি। বর্তমান বৈরী পরিস্থিতিতে একজন সাহসী যোদ্ধা হিসাবে positive থাকতে চাই। positive চিন্তা এক বিশাল শক্তি। মনে ও শরীরে এর প্রভাব অকল্পনীয়।
জীবনে হয়তো অনেক যুদ্ধে হেরেছেন। অনেক কষ্ট পেয়েছেন। সেই সময় গুলোতে হয়তো সেটা সুখের ছিল না। আজ পরিনত বয়সে ওই সৃতি গুলো রোমন্থন করুন। অনেক মধুর মনে হবে।
গত সন্ধায় ডাঃ মোস্তফা খালেদ স্যার ফোন করেছিলেন। উনি বর্তমানে স্বাস্থ বিভাগের চট্রগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কাজের সূত্রে পরিচয়। সর্বজন শ্রদ্ধেয়, কাজ পাগল, সুদক্ষ একজন leader. তার প্রকৃতি প্রেম, সাহিত্য সমনস্কতা, ব্ন্ধুপ্রিয়তা সকলকেই মুগ্ধ করে। ফোন করে বল্লেন সালাহউদ্দিন ফেসবুকে আপনার বৃষ্টির ভিডিও টা অনেক সুন্দর লেগেছে। ভিজলেন না কেন। খুব ছোট বেলার একটা গল্প বল্লেন। উনি তখন নোয়াখালী জেলা স্কুলের ছাত্র। ছুটি শেষে লক্ষিপুর থেকে ফিরছিলেন। লক্ষিপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে ৮ মাইল পায়ে হেঁটে চাটখিল থেকে বাস ধরে নোয়াখালী আসতে হয়। পথে বৃষ্টি। এক মসজিদে আশ্রয় নেন। বৃষ্টি থামেনা। বসে বসে বাড়ি থেকে পেড়ে আনা খেজুর খাওয়া। বৃষ্টি আর থামেনা। এক সময় ভিজে ভিজে ৪ মাইল পথ হেঁটে যাওয়ার সেই গল্প গত সন্ধায় এক অন্য রকম নষ্টালজিয়ায় হৃদয় ছুয়ে গেছ। ওই সময়ে হয়ত বিষয়টি কঠিন ছিল। আজ তা মন ছুয়ে যাওয়া গল্প। আবার ও কনো এক মুসলধারে বৃষ্টিতে ভিজার ইচ্ছা জাগায়। এমন গল্পতো আপনার জীবনেও আছে। এমন মোস্তফা খালেদ স্যার রা আপনার জীবনেও আছে। শুনুননা তাদের গল্প গুলো। আপনিওতো কারো কারো জীবনে মোস্তফা খালেদ স্যার। পছন্দের মানুষের সাথে গল্প করা এক ভীষণ আনন্দের বিষয়। মানুষ এক বড় সৃতি ভান্ডার। সুখের গল্প করুন গল্প শুনন। ফোন রাখার আগে খালেদ স্যার বল্লেন সালাহউদ্দিন বাড়িতে বসেইতো আছেন লেখালেখি করেন। ওই ছোট কথাটাই এ লেখার উত্স। কথা অনেক শক্তিশালী জিনিস। কথা বলুন। ইতিবাচক কথা। একটা ছোট্ট কথায় কত কিছু বদলে দিতে পারে।

এই করোনায় অনেকের জীবনকে থমকে দিয়েছে। আয় রোজগার কমে গেছে। আপনার আসে পাসে এমন কেউ কি আছে যে কষ্টে আছে, বলতে পারছে না? সংগোপনে প্রয়োজনীয় কিছু উপহার নিয়ে যান। পরকালে কি পাবেন জানিনা কিন্তু যে আনন্দ পাবেন তার মূল্য অনেক।
আমি আপনি কেহই বাংলাদেশের জেনারেল ম্যনাজার না। করোনা সমস্যা সমাধানের দয়ীত্তপ্রাপ্ত কেহ না। হয়ত সূযোগ ও নাই। ওসব নিয়ে চিন্তা করেও লাভ নাই। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্যে ইতিবাচক কাজ গুলো করে যেতে পারি। মাক্স পরা,সামাজিক দূরত্ব বজায় চলা, হাত পরিস্কার রাখা। thats all. তাতে আত্ববিশ্বাস বাড়ে। মনে হবে আমার আক্রান্ত হবার ভয় নাই। ভয় অনেক খারাপ জিনিস। ভয় জীবনের এনার্জি নষ্ট করে। করোনা থেকে ভয়মুক্ত থাকতে এটাই এখন আমাদের প্রধান কাজ। যেহেতু আক্রান্ত হইনি চলুন সামনে আক্রান্তের ভয় থেকে মুক্ত থাকি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলি।
চোখ বন্ধ করে ভাবুনতো এমন কতজন আত্মীয় আছেন যাদের খবর নেননি বহুকাল। ভূলেও গেছেন অনেক কে। প্রতিদিন তেমন কাউকে ফোন দিন। খবর নিন। হয়তো এমন একটা ফোন অনেক ভালো লাগার অনুরনন তৈরি করতে পারে। কি এক ভয়াল ব্যস্ততায় কেটেছে আমাদের গত কয়েক দশক। জীবন জীবিকার যুদ্ধ, ফাইল, মেমো, ই মেইল এসব ই শুধু পড়েছি না হয় লিখছি। চলেন এ কদিন লিখি। লেখক হতে হবেনা। আবল তাবল যা ইচ্ছা লিখুন। অন্তত অফিসিয়াল চিঠি পত্রের চাপ তো নাই। লিখতে পারেন বন্ধুকে অথবা নিজেকেই লিখুন। হয়ত বহুদিন ধরে নিজের কথাও ভাবেন নি।
আমাদের দেহ অতি জটিল যন্ত্র। এতে টুকটাক সমস্যা হবেই। এই সময়টায় সিজনাল নানা রকম সর্দিকাশি হয়। সব কিছুকে করোনার সাথে রিলেট করবেন না। গত সাপ্তাহে আমার জর ছিল। এখন ভালো আছি। পেনিক হতে পারতাম। পেনিক না হবার সক্ষমতাকে শুধু কাজে লাগিয়েছি মাত্র।

একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো মানুষ নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রানী বলে। মানুষের এই শ্রেষ্ঠত্ব বুদ্ধির কারনেই বলে কিংবা বলার স্বক্ষমতা আছে বলেই হয়তো বলে। কতোগুলো বিষয় ভাবলে আমার কাছে বড় অদ্ভুত লাগে। পৃথিবীর একমাত্র প্রনী মানুষই ঔষধ খায়। ৭০ ভাগ মানুষ ই নিয়মিত কোনো না কোনো ঔষধ খায়। মানুষ দাত মাজে। চশমা পরে। জন্মের সময় ধাত্রী লাগে। নানান সমস্যার মধ্যে মানুষই থাকে। সব সতর্কতা অবলম্বন করার পর ও ১০ ভাগ মানুষ প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বাঁচে। ৭০/৮০ বছর বাঁচতে পারলেই খুশী। অকাল মৃত্যু, শিশু মৃত্যু এসব অতি সাধারণ বিষয়। অথচ একটা কচ্ছপ ৩/৪ শত বছর বাঁচে। এই কথাগুলো এ কারনেই বলা যে এ গ্রহে আপনার নিজেকে মোষ্ট পাওয়ারফুল ভাবার দরকার নাই। আপনার সমস্যা থাকবেই। কচ্ছপের মত আপনি ৩/৪ শত বছর বাঁচবেন না। জগতে আমার আপনার মত কোনো প্রাণীর মামা খালু লাগে না। ধাত্রী লাগেনা। ব্রাশ করেনি বলে কোন প্রাণীর দাঁত পড়ে গেছে, অন্ধ হয়ে গেছে এমন দেখা যায় না। প্রানী কুলে মানুষ ছাড়া কারো মধ্যে দূর্নীতি নাই। জেলখানা নাই। নোংরামি নাই। তাদের যত সমস্যা তা আমরাদের মতো এই মানুষদের সৃষ্ট। নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবার জায়গা থেকে বের হয়ে চলুন সবাই কে নিয়ে বাঁচি। করোনা নামক এই অনূজীব হয়ত সে শিক্ষা ই দিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির প্রতি জুলুম করা ছেড়ে দিন। অন্তত যতটা কম করা যায়।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রভূত্ব মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। মানুষের অতি লোভী ও ভোগ বাদি রাষ্ট্র ব্যবস্থা এই চর্চা তরান্বিত করেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে চাইলে এর থেকে কিছুটা বের হয়ে আসা যায়। প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে বাঁচার আনান্দ ই আলাদা।

মানুষ নাকি শ্রেণি স্বার্থের বাহিরে যেতে পারে না, কথাটা কতটা সত্য জানি না।
সম শ্রেণির ঐক্য হয় তার পরে শ্রেণি সগ্রাম হয়, দ্বন্দ্ব হয়, নতুন সমাজ বিনির্মান হয়। পূঁজি বাদি সমাজে দ্বন্দ্বের ফলে সমাজতান্ত্রিক সমাজের জন্ম হয়েছে। সেই রাশিয়া ও আবার পূঁজিবাদি ধরায় ফিরে গেছে। কেউ কেউ এখন অধিক কল্যান রাষ্ট্র করে ধনী দরিদ্রের দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।গনতন্ত্রের লালনকরী আমেরিকার অবস্থা গত দুই সাপ্তাহ ধরে দেখছি। আগামীতে তারা গনতন্ত্র আর মানবাধিকার রক্ষার নামে অন্য দেশ আক্রমণ এর জায়গায় থাকবে বলে মনে হয়না।
গ্রীক, অটোমান, মোঘল সবাই ছিল। এখন নাই। পূঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, খমতা সব কিছু বহমান। এই মহা বিশ্বে সবইতো এক চলমান প্রক্রিয়া মাত্র। চিরন্তন কিছু নাই। আমি আপনি কেন কোন একটা দর্শন কে চিরন্তন ভেবে অন্য দর্শনের বা বিশ্বাসের প্রতি বৈরী হব? লাভ কি তাতে? পরধর্ম ও ভিন্ন দর্শনের প্রতি ইতিবাচক হলে বরং মনের মধ্যে অনেক বড় জায়গা তৈরী হয়। মানুষ নিজেই তখন এক মহা বিশ্ব হয়ে যায়। কেউ যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তবে নিশ্চিত যে তিনি এক জন ঈশ্বরেই বিশ্বাস করেন। একজন ঈশ্বর নিশ্চয়ই একাধিক ধর্মীয় দর্শন দেন নি। তাই যদি হয় তাহলে কনটা তিনি দিয়েছন? না কি সব কিছুই মানব সৃষ্ট? এসবের সার্বজনীন সূরাহা আজও হয়নি। হয়ত হবেও না। তাই আসুন ওই চিন্তা ও বিতর্ক থেকে বের হয়ে নিজেকে সার্বজনীন করে নেই। তাতে মনে শান্তি আসবে। জগতে হয়তো আমি আপনি সব মানুষকে বদলাতেও পারবোনা। দরকারইবা কি। চলেন নিজেই মনে মনে বদলে যাই। ভালো থাকি।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!