Thursday , May 2 2024
You are here: Home / Uncategorized / কুষ্টিয়া পোড়াদহ নাহার প্রাইভেট ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আম্বিয়া খাতুন
কুষ্টিয়া পোড়াদহ নাহার প্রাইভেট ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ,   মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আম্বিয়া খাতুন

কুষ্টিয়া পোড়াদহ নাহার প্রাইভেট ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আম্বিয়া খাতুন

কুষ্টিয়া পোড়াদহ নাহার প্রাইভেট ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আম্বিয়া খাতুন

নিজস্ব প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে। আর এসব অননুমোদিত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে রুগী ও রুগীর আত্মীয় স্বজনরা। জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুরের পোড়াদহ এলাকার নাহার প্রাইভেট ক্লিনিকে কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পালপাড়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৪৫) ভর্তি হয়ে অপারেশনের পর তার অবস্থা অবনতি হয়। পরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আম্বিয়া খাতুন ভর্তি হলে তার অবস্থা আরও অবনতি ঘটে। বর্তমানে সে কুষ্টিয়া জেনারেল মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে আম্বিয়া খাতুন নাহার প্রাইভেট ক্লিনিকে জোরায়ের নাড়ীর অপারেশন করে। এরপর থেকে আম্বিয়া খাতুনের পেটে ব্যাথা অনুভব হত। এই কারণে আম্বিয়া বেগম রাজশাহী, ঢাকাতে চিকিৎসা করেও তার পেটের ব্যাথা কমেনি। সাম্প্রতি সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে এক্সরা করলে বোঝা যায়, তার শরীরে মধ্যে সুচ জাতীয় কিছু রয়েছে। এরপর স্থানীয় গণ্যমান্য মাতব্বর নিয়ে আম্বিয়া খাতুন ও পরিবারের লোকজন নাহার ক্লিনিকে গেলে ক্লিনিক কর্তৃক তাকে গত ১৪ জুন ক্লিনিকে ভর্তি করে অপারেশনের জন্য। ক্লিনিক থেকে এক্সরা করে একই অবস্থা দেখতে পায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অপারেশন করেন ডাঃ জুয়েল। অপারেশনের পর তার অবস্থা আরও অবনতি হয়। এক পর্যায়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে বাক-বিতন্ডা করে ক্লিনিক থেকে আম্বিয়া খাতুনকে বের করে নিয়ে আসে। মিরপুর থানায় অফিসার ইনচার্জ আবুল কালামের নিকট অসুস্থ রোগী আম্বিয়া খাতুনের পক্ষে অভিযোগ দেন আম্বিয়া খাতুনের ছেলে মিন্টু। এ ব্যাপারে মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালামের সাথে কথা বললে, তিনি জানান, রোগীটাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলে পাঠিয়েছি এবং কাগজ নিয়ে আসতে বলেছি। এ ব্যাপারে আহম্মদপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই লিখন পোড়াদহ নাহার প্রাইভেট ক্লিনিকে অনুসন্ধানের জন্য তদন্তে গিয়েছিল।

নাহার প্রাইভেট ক্লিনিকের পরিচালক হেলাল উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে, তিনি জানান, ৪ বছর আগে এই রোগী এই ক্লিনিকে অপারেশন হয়। পরে আমাদের ক্লিনিকে আসলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে ভর্তি করি এবং ডাক্তার জুয়েল তাকে অপারেশন করে। এক্সরেতে জানা যায়, শরীরে একটি পিন রয়েছে। ছাড়পত্র বাদেই রোগীর পরিবার রোগীকে নিয়ে যায়। আহম্মদপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই লিখন ক্লিনিকে তদন্তে এসেছিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহে গড়ে উঠেছে নাহার প্রাইভেট ক্লিনিক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। ক্লিনিটির নেই কোনো জরুরি বিভাগ, নেই রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত কোনো যন্ত্রপাতি বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট। ধার করা পার্টটাইম কতিপয় ভুয়া ডাক্তার দিয়ে চলছে জটিল কঠিন অপারেশনসহ নানা রোগের চিকিৎসা। নাহার প্রাইভেট ক্লিনিকটির রেজিস্ট্রেশন মেয়াদ উত্তীর্ণ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, সরকারি হাসপাতাল, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র,কমিউনিটি ক্লিনিক ও এক শ্রেণীর পল্লী চিকিৎসক রোগী ধরা দালাল হিসেবে কাজ করছে। রোগী প্রতি কমিশনের আশায় এসব দালালরা। অভিনব কৌশল ও প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী বাগিয়ে নিয়ে তথাকথিত এই ক্লিনিকে ভর্তি করছে। ফলে সার্বক্ষনিক চিকিৎসক ছাড়াই এই ক্লিনিক চললেও তাদের রোগীর অভাব হচ্ছে না। চিকিৎসার নামে প্রতি নিয়ত চলছে অপচিকিৎসা। কুষ্টিয়ার বেশীর ভাগ ক্লিনিকে মালিক-কর্মচারীরা চিকিৎসক সেজে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্থানীয়রা এ ক্লিনিকটিতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সরকারি বিধি মোতাবেক প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগণষ্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস অনুমতিপত্র, পারমাণবিক শক্তি কমিশনের অনুমতিপত্র, আয়কর-ভ্যাট, ডিপ্লোমা নার্স ও প্যাথলজি ডিপ্লোমাধারী সার্বক্ষণিক এমবিবিএস চিকিৎসক অবশ্যই থাকতে হবে। এ ছাড়াও ১৯৮২ সালের ‘দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড লাবরেটরিজ রেগুলেশন’ অনুযায়ী ১০ শয্যাবিশিষ্ট কোন ক্লিনিকের জন্য জরুরি বিভাগে তিনজন স্থায়ী চিকিৎসা কর্মকর্তা, তিনজন ডিপ্লোমাধারী জ্যেষ্ঠ সেবিকা, তিনজন কনিষ্ঠ সেবিকা, তিনজন আয়া, তিনজন ওয়ার্ডবয়, একজন ব্যবস্থাপক, দু’জন পাহাদার, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ
অস্ত্রপাচার কক্ষ (অপারেশন থিয়েটার) না থাকলে সেখানে কোনো রোগীর অস্ত্রপাচার (অপারেশন) করা যাবে না বলে শর্ত দেয়া রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারির যোগসাজশে এই ক্লিনিকটির মালিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!