বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা ঃ হ্যালো স্যার আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন, গ্রামীণ ফোনের লটারীতে আপনার একটি গাড়ী, ফ্লাট, নগদ টাকা পেয়েছেন। আপনি খুব সৌভাগ্যেবান ব্যাক্তি, তাই আপনাকে এ পুরস্কার নিতে হলে এখনই এ নম্বরটিতে বিকাশের মাধ্যমে দাবীকৃত টাকা দিন। কাউকে বললে সে আপনাকে নিষেধ করবে। আবার কখনোও গভীর রাতে সুমধুর নারী ও পুরুষ কন্ঠে নানা ধর্মীয় ও স্বর্ণালংকার পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। আবার নারীরা প্রেমের অভিনয় করে হাতিয়ে নেয় অর্থ।
এভাবেই গ্রামীণ, টেলিটক, বাংলালিংক, রবিসহ বিভিন্ন ধরনের মোবাইলের সিম ব্যবহার করে প্রতারনা করে আসছে নারী-পুরুষ। বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতারনার কৌশলও পাল্টে যাচ্ছে। কখনো ইউএনও, ওসি, ডিসি, এস,আই, সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কখনো রোগীর আত্বীয়, ভূলে বিকাশে টাকা যাওয়া, স্বর্ণালংকারের লোভ দেখিয়ে, লটারী পাওয়াসহ ফেইসবুক হ্যাক করে মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছে। আর এ প্রতারক চক্রের কৌশল দিন দিন পরিবর্তনও করছে। এটি কোন বাংলা সিনেমার বা কাল্পনিক গল্প নয়। নারী-পুরুষ সবাই রাতে অফিস করে থাকেন। আর এ প্রতারক চক্রের কৌশল দিন দিন পরিবর্তনও করছে। এ প্রতারনার করে অনেকেই ভ্যান চালক, নসিমন চালক, শ্রমজীবি, গার্মেন্সে চাকুরী, ভবঘুরে, সাধারণ ব্যবসায়ী কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এ ধরনের কোটিপতি এখন শতাধিক বেকার ও ভবঘুরে যুবক। তাদের অপকর্ম ও সুরক্ষায় কাজ করে অন্তত ২০টি মোটর সাইকেল টিম। ওয়েলকামপার্টির সদস্যদের রোসানলে পড়ে এখন অনেক নিরিহ কৃষক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানীর শিকার হচ্ছে। নিজেরা অপরাধ করেও দোষ চাপাচ্ছে অন্যের ঘাড়ে। এ কাজে সহযোগিতা করতে কথিত রাজনৈতিক নেতারা। থানা পুলিশ কিছু ওয়েলকামপার্টির সদস্যকে আটক করলেও পড়ে ছাড়া পেয়ে পুনরায় জড়িয়ে পড়েছে প্রতারনার কাজে। সর্বপ্রথম বিকাশ প্রতারক চক্রের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার ঢুমাইন এলাকা থেকে বেশির ভাগ প্রতারকের হাতেখড়ি। এখন মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মহেশপুর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দু,টি এলাকাই বালিয়াকান্দি উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে এ উপজেলার অনেক গ্রামের যুবকরা জড়িয়ে পড়েছে বিকাশ প্রতারনার কাজে। এ প্রতারকচক্র দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে।
এ ধরণের এক বিকাশ প্রতারক চক্রের প্রধানকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতের নাম, মিরাজ হোসেন (৩৫)। সে উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের নারুয়া (মদনডাঙ্গী) গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে।
মিরাজের পিতা শুকুর আলী পেশায় একজন ভ্যান চালক। দুই ভাই মিরাজ ও মিরুল সংসারের টানাটানিতে গড়াই নদীর তীরে বাড়ী হওয়ার কারণে দিনে ভ্যান চালক ও রাতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছিল। হঠাৎ করেই মোটর সাইকেল ক্রয় করে রাজকীয় চলাফেরা করতে থাকে। তখনই মানুষের নজরে আসে রাতারাতি বদলে যাওয়া মিরাজের জীবন। সে তার মনোনিত লোকদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করে বিকাশ কল সেন্টারের ভূয়া নম্বর ব্যবহার করে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা।
বালিয়াকান্দি থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের নারুয়া, বাকসাডাঙ্গী, মধুপুর, চরটাকাপোড়া, চরঘিকমলা, মরাবিলা, কোনাগ্রাম, সোনাকান্দর, গাড়াকোলা, খাটিয়াগাড়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের অলংকারপুর, ঢোলজানি, সমাধিনগর, পুষআমলাসহ বিভিন্ন গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে টিম ওয়ার্ক কাজ করে। কেউ বিকাশের দোকানের খাতার ছবি সংগ্রহ, মোবাইলে টাকা হাতানো, টাকা উত্তোলন, কেউ প্রশাসন প্রবেশে নজরদারী, বিকাশ সিম সংগ্রহ করার কাজে ভিন্ন ভিন্ন প্রতারকরা কাজ করে।
তিনি বলেন, গত ১লা মে মাসে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাহাতিমোহন গ্রামের হরিপদ ঘোষের ছেলে দেবাংশু ঘোষের কাছ থেকে ৮৪ হাজার ৯শত টাকা মোবাইলে প্রতারনার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় বিকাশ প্রতারক চক্র। এ বিষয়ে দেবাংশু ঘোষ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা প্রতারকের বিরুদ্ধে বালিয়াকান্দি থানায় জিডি করেন। জিডির সুত্রধরে থানার পুলিশ তদন্তে নামে। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে প্রতারকদের সনাক্ত করে। পরে দেবাংশু ঘোষ বাদী হয়ে থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ প্রতারকদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করে। উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের চরটাকাপোড়া গ্রামের কালাম খানের ছেলে রুহুল আমিন ওরফে রুহুকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে ২১টি মোবাইলের বিকাশ করা সিম, একটি এ্যাপাসী রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মোটর সাইকেল, প্রতারনা কাজে নিয়োজিত একটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক সোমবার সন্ধ্যায় থানার এস,আই মাজহারুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে ৭টি সিম, ২টি স্মার্ট ফোনসহ বিকাশ প্রতারক চক্রের গ্রুপ প্রধান মিরাজকে গ্রেফতার করে। তাকে মঙ্গলবার রাজবাড়ী আদালতে পাঠানো হয়েছে।