নিজস্ব প্রতিবদক : পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ রোডের দিকে একটু এগিয়ে গেলেই রাস্তার ডান পাশে দেখা মিলবে ১৮শ’ শতকের আর্মেনীয়দের তৈরি ঢাকা শহরের বিখ্যাত বাড়ি রূপলাল হাউজ। ঢাকার সবচেয়ে বড় বাড়িগুলোর মধ্যে এটি একটি। রূপলাল হাউজ তার রূপ হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। এখন এর অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তির পথে। বাড়িটির নিচতলায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মসলার আড়ত, উপরে বিভিন্ন কোঠায় মানুষের বসবাস। বর্তমানে জীর্ণশীর্ণ এই রূপলাল হাউজ জামাল হাউজ নামে পরিচিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা পাড়ে জীর্ণশীর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে এক সময়ের অভিজাত ও রাজকীয় রূপলাল হাউজ। স্থাপত্য নকশায় বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ ভবনটিতে যথেষ্ট বৈচিত্র্য এবং কারুকাজ দেখা গেলেও ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমান রূপলাল হাউজের আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
এভাবেই আড়ৎ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে রূপলাল হাউজের
এমন জরাজীর্ণ অবস্থায়ও জামাল হাউজের বিভিন্ন কোঠায় মানুষজন বসবাস করছে। নিচের কোঠাগুলোতে মসলার আড়ত। ভবনটির চারদিকে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ নানারকম মসলার বস্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, অনেক আগের বাড়ি, স্বাধীনের আগে বাড়িটি জামাল নামে একজন কিনে নেন এইটুকুই জানি। বর্তমানে এই বাড়ি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও চলমান। মাসিক ভাড়া দিয়ে বসবাসকারী ও ব্যবসায়ীরা এই ভবনে থাকেন। এছাড়া এই বাড়িটির ওপর-নিচ কোঠাগুলো বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভেতরে এরকম বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজ-রসুন ও মসলা পাওয়া যায়
এছাড়া ১৮৮৮ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডাফরিনের ঢাকা সফরকালে রূপলাল হাউজে অবস্থান নেন। এই বাড়িতেই নিয়মিত গানের আসর বসতো। সেই আসর মাতিয়ে রাখতেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ ওয়ালীউল্লাহ খাঁ কিংবা লক্ষ্মী দেবীরা। এই বাড়ি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামেরও স্মৃতিধন্য। কবি এখানে এসেছেন বেশ কয়েকবার।
আরও জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগকালে রূপলালের উত্তরাধিকারীরা বাড়িটি বিক্রি করে ঢাকা ত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। এরপর বাড়ির মালিকানা নিয়ে শুরু হয় দলাদলি। তবে ১৯৫৮ সালে মোহাম্মদ সিদ্দিক জামাল রূপলাল হাউজ কিনে নেন। নাম দেন ‘জামাল হাউজ’।
এদিকে গত ২৩ মে সোমবার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রূপলাল হাউজ ও লালকুঠিকে পর্যটন উপযোগী করার জন্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ওই অংশ সরিয়ে নিতে বলেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে রূপলাল হাউজসহ যেসব স্থাপনা ঢাকার অস্তিত্ব সৃষ্টি করেছে এবং ঢাকাকে পরিচিতি দিয়েছে, সেগুলো করপোরেশনের আওতাধীন নয়। রূপলাল হাউজ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হলে, তা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা হবে।