Saturday , May 18 2024
You are here: Home / বিদেশ / এবার বাসমতি চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ ভারতের
এবার বাসমতি চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ ভারতের

এবার বাসমতি চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ ভারতের

আন্তজার্তিক ডেস্ক: সিদ্ধ চালের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের একদিন পর বাসমতি চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। রোববার দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে প্রতি টন বাসমতি চাল রপ্তানির মূল্য বেধে দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, প্রতি টন বাসমতি চাল এক হাজার ২০০ ডলার দরে বিক্রি করতে হবে। এই মূল্যসীমার কমে যেসব চাল রপ্তানির চুক্তি আগে করা হয়েছে, সেসব চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় রোববার এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, বাসমতি ছাড়া অন্যান্য চালের রপ্তানি আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাসমতির মোড়কে অন্যান্য চাল রপ্তানি করা হচ্ছে বলে সরকারি তদন্তে উঠে আসার পর নতুন এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বাসমতি চালের মূল্য টনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলারের নিচে হলে তা স্থগিত করে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এপিইডিএ) কাছে পাঠানো যেতে পারে। দেশটির বাসমতি চাল রপ্তানির নিয়ন্ত্রণ এপিইডিএর হাতে রয়েছে।’ বাসমতির মোড়কে অন্যান্য চাল রপ্তানি করা হচ্ছে না সেটি কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়।

ইরান, ইরাক, ইয়েমেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন বাসমতি চাল রপ্তানি করেছে ভারত। বাসমতি চালের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আগে ভারতের সরকার সিদ্ধ চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত ২০ জুলাই অ-বাসমতি চালের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক ভারত। এরপর বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা ভারতের বাসমতি চালের আমদানির অর্ডার ব্যাপক বৃদ্ধি করেন। কিন্তু ভারত নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করায় অন্যতম প্রধান এই খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত। বিশ্ববাজারে মোট চাল রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশই যায় ভারত থেকে। চাল রপ্তানির শীর্ষে থাকা অন্য দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র।

গত কয়েক সপ্তাহে খুচরা বাজারে চালের দাম এক মাসে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারতের সরকার। বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় দেশটিতে চালের দাম কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।

গত বছর ভারত ১৪০টি দেশে ২২ মিলিয়ন টন চাল রপ্তানি করেছে। যার মধ্যে ৬ মিলিয়ন টন ছিল তুলনামূলক কমদামী ইন্ডিকা চাল। (গত বছর বিশ্বব্যাপী চাল আমদানি-রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন টন)।

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী যত চাল আমদানি-রপ্তানি হয়েছে তার ৭০ শতাংশ ছিল ইন্ডিকা চাল, আর এখন ভারত সেই চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছর দেশটি খুদের চাল এবং বাসমতি চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপ করে। এরপরই আসল পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা।

প্রত্যাশিতভাবেই জুলাইয়ে ভারতের চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আইএমএফের অর্থনীতিবিদ পিয়ে-অলিভার গোরিনচাস বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা চালের দাম বাড়িয়ে দেবে এবং বিশ্বব্যাপী শস্যের দাম ১৫ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাজার বিশ্লেষক সিরলে মুস্তাফা বলেছেন, ভারত এমন সময় চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যখন ‘সময়টা ভালো নয়।’ প্রথমত, ২০২২ সালের শুরু থেকেই চালের দাম বাড়ছে। গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত যা ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, চালের সরবরাহে এখন বিঘ্ন ঘটছে, বাজারে নতুন চাল আসতে আরও তিন মাস বাকি আছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় অস্বাভাবিক আবহাওয়া— ভারতে অধিক বৃষ্টি ও পাকিস্তানে বন্যা চাল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এছাড়া সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চালের মূল্যও বেড়েছে। অপরদিকে যেসব দেশ চাল আমদানি করে তাদের মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় আমদানি বেড়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে এ ব্যবসার ব্যয়ও বেড়েছে।

জাতিসংঘের বাজার বিশ্লেষক মুস্তফা বলেছেন, ‘আমরা এমন পরিস্থিতিতে আছি যেখানে আমদানিকারকরা বাধার মধ্যে পড়েছেন। এসব আমদানিকারক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবেন কি না এখন এটিই দেখার বিষয়।’

ভারতের নিজস্ব মজুত রয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ টন চাল। যা প্রয়োজনে তুলনায় প্রায় ৩ গুণ। এসব চাল দেশটির ৭০ কোটি মানুষকে কম দামে দেওয়া হয়। গত বছর ভারত বড় ধরনের মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে গেছে। গত অক্টোবর থেকে দেশটির বাজারে চালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। যা নির্বাচনের আগে দেশটির সরকারের ওপর তৈরি করেছে বাড়তি চাপ।

ভারতের কৃষি নীতির বিশেষজ্ঞ দ্বেবিন্দর শর্মা বলেছেন, এল নিনোসহ অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে চালের উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর এ কারণে সরকার আগে থেকেই এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাইছে।

অনেকের বিশ্বাস ভারতের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত নয়। কারণ এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। খাদ্যবিষয়ক সংস্থা ইফরি জানিয়েছে, বিশ্বের ৪২টি দেশ তাদের মোট আমদানির অর্ধেক চালই আনে ভারত থেকে। আফ্রিকার কিছু দেশ রয়েছে যেগুলো মোট আমদানির ৮০ শতাংশ যায় এশিয়ার এই দেশ থেকে।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!