Sunday , May 5 2024
You are here: Home / ব্রেকিং নিউজ / থামছেই না গোদাগাড়ীতে নদী ভাঙ্গন, অবহেলায় ভাঙ্গছে পদ্মাপাড়
থামছেই না গোদাগাড়ীতে নদী ভাঙ্গন, অবহেলায় ভাঙ্গছে পদ্মাপাড়

থামছেই না গোদাগাড়ীতে নদী ভাঙ্গন, অবহেলায় ভাঙ্গছে পদ্মাপাড়

আবু হেনা মোস্তফা জামান, রাজশাহী:

গোদাগাড়ী উপজেলার ৭ নম্বর দেওপাড়া ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের  নিমতলী গ্রাম। প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় কোনভাবেই থামছে না নদীভাঙ্গন। এতে অনেকটায় আতঙ্ক ও হতাশা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা।

মাঝারি কিংবা তীব্র বাতাস হলেই বাড়ছে নদীর ¯্রােত, তৈরি হচ্ছে ঘুর্ণিপাক। আর এই পাকের কারণেই ক্রমান্বয়ে ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ীর ৭ নম্বর ইউনিয়নের দেওপাড়া নিমতলী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাঝারি কিংবা মৃদু বাতাসে হলেই নদীতে ¯্রােতের সৃষ্টি হচ্ছে, আর তাতেই নদীতে শুরু হচ্ছে ঘুর্নিপাক। এই সৃষ্ট পাকের কারণে ভেঙ্গে পড়ছে নদীপাড়ের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। পদ্মার নদীভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক সেখানে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগভর্তি বালি। তারপরও যেনো  থামছে না প্রাকৃতিক বিপর্যয়। প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিঘা বিঘা আবাদী জমি ও বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই হয়েছেন নি:স্ব। পশ্চিম পাশে একটি প্রাইমারি স্কুলও অপেক্ষায় রয়েছে পদ্মায় তলিয়ে যাওয়ার।

পাউবো সূত্র বলছে, গত ১৭ আগস্ট তারা জানতে পারেন ৭ নম্বর গ্রোগ্রাম ইউনিয়নের নিমতলী গ্রামের নদীভাঙ্গনের কথা। অত:পর গত ১৮ আগস্ট থেকে জিও ব্যাগভর্তি বালি ফেলে সাময়িকভাবে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ চেষ্টা করা হয়।  পাউবোর ভাষ্য, গত ১৮ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বস্তা জিও ব্যাগে বালি ফেলা হয়েছে। সেখানে নদীভাঙ্গন রোধে প্রায় ১০ হাজার বস্তা ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ। তবে সেটি নদীভাঙ্গনের ওপর নির্ভর করবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। গোদাগাড়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন সার্ভেয়ার পর্যবেক্ষণ করছেন জিও ব্যাগভর্তি বালি ফেলার কাজ তদারকিতে।

নিমতলীর স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াসিলুল হক (৬০)। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালের দিকে একবার গ্রামটি নদীভাঙ্গনের কবলে পড়ে একেবারেই বিলীন হয়ে গিয়েছিল। কালক্রমে পুণরায় পলি জমে চর জাগলে লোকেরা আবার এসে বসতি স্থাপন করে।

গ্রামের আরেক প্রবীণ আক্তার আলী (৬৪) বলেন, আজ থেকে বিশ বাইশ বছর আগে যখন নদীর বাধের কাজ হচ্ছিল তখন সরকার বদলে যায়। এখানকার কাজও বন্ধ হয়ে যায়, টাকাও ফেরত চলে যায়। গোদাগাড়ীর নদীর ধারে পূর্ব পশ্চিমের দুই দিকেই নদীর ধারে কাজ হলেও এখানে কাজ হয়নি।

আদিবুল হাসান দিপু (৩৮) নামের এক স্থানীয় যুবক জানান, প্রায় ২৩ বছর যাবত এদিকে কোনো নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়নি। তবে এবার বর্ষার শুরুর দিকে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে জানানো হয় জনপ্রতিনি স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কিন্তু তারা কেউই প্রথমার্ধে নদীভাঙ্গনে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। এতে ৭ নম্বর দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমতলী গ্রামটির প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার নদী তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, পশ্চিমে আলিপুর গ্রাম ও পশ্চিমে মোল্লাপাড়া গ্রামে নদীর ধারে বাধ ও পাড় বাধানো কাজ হলেও নিমতলীতে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় কোনো কাজ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা স্থানীয় প্রশাসন। তার অভিযোগ, আষাঢ়ের শুরুতেই যদি নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করত তবে এতো মানুষের ফসল ও বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হতো না।

নিমতলী গ্রামের বাসিন্দা মুস্তাকিম (২৩)। ব্যক্তিগত মালিকানা থাকা আড়াই বিঘা জমি লিজ নিয়েছিলেন চাষাবাদের জন্য। লাগিয়েছিলেন কেশর আলু, পেয়াঁজ, মরিচ। সবই গেছে নদীগর্ভে।

মুস্তাকিম বলেন, এক বছরের জন্য ২৫ হাজার টাকায় আড়াই বিঘা জমি লিজ নিয়েছিলাম, করেছিলাম আবাদ। জমিতে গাছগুলো সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠেছিল কিন্তু রাতারাতি সেগুলো খেয়ে ফেলেছে পদ্মা। এখনও আমার গাছের কথাগুলো মনের মধ্যে ভাসছে ভাই। আমার সব টাকা পানিতেই গেল।
তিনি বলেন, ১৮ তারিখ থেকে বালুর বস্তা ফেলা কাজ চলছে। তারমধ্যে দুইদিন কাজ বন্ধ ছিল। এই দুইদিনে প্রায় বিঘা বিঘা জমি নদী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। আগেই এর ব্যবস্থা নিলে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যেতো বলে মন্তব্য করেন এই যুবক।

এনিয়ে কথা হয় ০৫ নম্বর দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, গত তেইশ চব্বিশ বছরে এই এলাকায় কোনো ভাঙ্গন ছিল না। তবে এবারের ভাঙ্গন টা আকস্মিক হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ বস্তা ফেলা উচিত তা ফেলছে না। এপর্যন্ত শুনেছি ৫ হাজার বালির বস্তা ফেলেছে। কিন্তু তাতেও সন্দেহ আছে, কারণ ইউনিয়ন পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকেই সেখানে রাখা হয়নি। তারা নিজেরা নিজেদের মতন কাজ করছে।

গ্রামবাসীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, নদীভাঙ্গন শুরু পরপরই আমরা স্থানীয় জনপ্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছিলাম। তারাই কোনো পদক্ষেপ সময়মতো নেয়নি। যার কারণে এলাকাবাসী আমাদেরকেই উল্টো দুশছেন বলে জানান তিনি।

নদীভাঙ্গন প্রসঙ্গে পাউবোর সাব এ্যাসিসট্যান্ট ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মো. রিফাত করিম বলেন, এই এলাকায় তিন থেকে চার কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙ্গন প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা আগে থেকে ছিল না। গত ১৭ তারিখ জানার পরপরই তা আমাদের পাউবোর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানানো হয় এবং তদপ্রেক্ষিতে এই এলাকায় নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন। দ্রæত প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে এই এলাকায় ১০ হাজার বস্তা জিও ব্যাগে বালি ফেলার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হাজারের বেশী বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও নদীভাঙ্গন রোধ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

নদীভাঙ্গনে জিও ব্যাগ কতটুকু কার্যকর এবং এই এলাকায় আগামীতে বাধনির্মাণ কিংবা স্থায়ী কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই এই এলাকাসহ রাজশাহীর যেসব এলাকায় নদীভাঙ্গন ও বাধগুলোতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেসব এলাকায় জরিপ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। আগামীতে মূল নদীতে ড্রেজিং,  বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সিমেন্টের তৈরি বøক ফেলার মাধ্যমে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধেও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে নদীভাঙ্গন সম্ভব, পুরোপুরি নয়। আবার নদীর পানি প্রবাহের তীব্রতা ও নাব্যতা যদি বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে এসব জিও ব্যাগে বালি ফেলেও কোনো কাজ হবে না বলেও জানান তিনি।

About দৈনিক সময়ের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top
error: Content is protected !!